যুক্তফ্রন্ট থেকে ছয়দফা-২ Flashcards
আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম’ শব্দটি বাদ যায় কত সালে?
১৯৫৫ সালে।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবরের তৃতীয় কাউন্সিল সভায় ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হিসেবে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয় যাতে অমুসলিমরাও দলে যোগ দেয়ার সুযোগ পান। আওয়ামী মুসলিম লীগ দলের নাম পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ নির্ধারণ করা হয়।
গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশকে বলা হয়-
আরপিও।
গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশকে বলা হয় আরপিও (রিপ্রেজেন্টেটিভ পিপলস অর্ডার)।
কাগমারি সম্মেলনের মূল আলোচ্যসূচি ছিল কোনটি?
+খ।
কাগমারি সম্মেলন টাঙ্গাইল জেলার কাগমারিতে ১৯৫৭ সালের ৬-১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন ও সাংস্কৃতিক সম্মেলন। ৭ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিল অধিবেশনে মূল আলোচ্যসূচি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি।
কিন্তু সিয়াটো ও সেন্টোর সামরিক চুক্তির প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করলে সম্মেলনে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রণ্ট নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোর একুশ দফা প্রতিশ্রুতির অন্যতম ছিল জোটনিরপেক্ষ ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি। সোহরাওয়ার্দীর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বক্তব্য আওয়ামী লীগের বামপন্থি নেতৃবৃন্দ সমর্থন করেন নি।
এঁদের পুরোধা ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি (সম্মেলনেরও সভাপতি) মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। আওয়ামী লীগের আইনসভার সদস্য ও নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে কাউন্সিল অধিবেশনে মওলানা ভাসানী, সোহরাওয়ার্দীর অনুসৃত সামরিক জোটের সমালোচনা করেন। ওই ভাষণে মওলানা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলেন।
সোহরাওয়ার্দী সামরিক জোটের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন। তিনি পাকিস্তান স্বাক্ষরিত সামরিক চুক্তি এবং কেন্দ্র কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানে আরোপিত অর্থনৈতিক নীতিমালার পক্ষেও রায় দেন।
ছয় দফার কোন দফায় লাহোর প্রস্তাবকে ভিত্তি করা হয়েছে?
১ম দফা।
✅ছয় দফা কর্মসূচি: পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক পূর্ব বাংলাকে শোষণের বিরুদ্ধে ছয় দফা কর্মসূচি ছিল তীব্র প্রতিবাদ আর বাঙালির অধিকার আদায়ের সনদ বা মুক্তিসনদ । ছয় দফা কর্মসূচি ছিল-
✔️ ১ম দফা : লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্য সত্যিকার অর্থে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হবে । সরকার হবে সংসদীয় পদ্ধতির । সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সকল প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটে জাতীয় ও প্রাদেশিক আইনসভাগুলো গঠিত হবে ।
✔️ ২য় দফা : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের হাতে থাকবে দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয়। অবশিষ্ট সকল বিষয় প্রদেশের হাতে থাকবে।
✔️ ৩য় দফা : দেশের দুই অঞ্চলের জন্য দুটি পৃথক অথচ সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে অথবা দেশের দুই অঞ্চলের জন্য একই মুদ্রা থাকবে। তবে সংবিধানে এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে এক অঞ্চলের মুদ্রা ও মূলধন অন্য অঞ্চলে পাচার হতে না পারে।
✔️ ৪র্থ দফা : সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা ও কর ধার্য এবং আদায়ের ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে তবে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য আদায় কৃত অর্থের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকার পাবে ।
✔️ ৫ম দফা : বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক মুদ্রার উপর প্রাদেশিক সরকারের ক্ষমতা থাকবে। সকল প্রকার বৈদেশিক চুক্তি ও সহযোগিতার ব্যাপারে প্রাদেশিক সরকার দায়িত্ব পালন করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা যুক্তিযুক্ত হারে উভয় সরকার কর্তৃক মেটানো হবে।
✔️ ৬ষ্ঠ দফা : আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য আঞ্চলিক সরকারগুলো স্বীয় কর্তৃত্বাধীন আধা সামরিক বাহিনী (প্যারা মিলিশিয়া) গঠন ও পরিচালনা করতে পারবে
কত সালে Combined Opposition Party (COP) গঠিত হয়
১৯৬৪।
১৯৬৪ সালে Combined Opposition Party (COP) গঠিত হয়।
☑ ১৯৬৫ সালের নির্বাচন: ১৯৬২ সালের ৮ জুন সামরিক আইন স্থগিত করে দলীয় রাজনীতির অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৬৪ সালে আইয়ুব খান যথাক্রমে প্রেসিডেন্ট, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের ঘোষণা দেন।
১৯৬৪ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ এনডিএফ থেকে বেরিয়ে আসে। শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন।
১৯৬৫ সালের ২ জানুয়ারিতে ঘটিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে একক প্রার্থী দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কাউন্সিল মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম প্রভৃতি দল মিলে ‘সম্মিলিত বিরোধী দল’ (Combined Opposition Party, COP) নামে একটি জোট গঠন করে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে COP-এর প্রার্থী হিসেবে ফাতেমা জিন্নাহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ।
মৌলিক গণতন্ত্রীদের নিরঙ্কুশ সমর্থনে আইয়ুব খান ফাতেমা জিন্নাহকে সহজেই পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। অবৈধ প্রভাব ও প্রশাসনিক যন্ত্রকে ব্যবহার করেই আইয়ুব খান মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ এবং মে মাসে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করেন। ফলে ১৯৬৫ সালের নির্বাচন পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উন্নয়নে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি ।
কয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে DAC (Democratic Action Committee) গঠিত হয়?
৮টি।
দেশ বিভাগের পর থেকে রাজনৈতিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাঙালিরা দারুণ বৈষম্যের শিকার হয়। বাঙালির মনে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভের সঞ্চার হতে থাকে। এটিতে জ্বালানীর কাজ করে ছয়দফা ভিত্তিক আন্দোলন এবং প্রহসনমূলক আগরতলা মামলা।
উল্লেখ্য যে আগরতলা মামলার আসামিদের মুক্তির আন্দোলন এক পর্যায় আইয়ূব খান সরকারের উৎখাত আন্দোলনে রূপ নেয়। বাঙালির এই আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে পূর্ব পাকিস্তানের ৮ টি বিরোধী রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে ‘গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটি’ (Democratic Action Committee) সংক্ষেপে DAC নামে একটি ঐক্যজোট গঠন করা হয়।
পরবর্তীতে ছাত্রদের এগারো দফা আন্দোলন এটির সাথে একাত্ম হলে আন্দোলন দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলে।
শরিফ কমিশন’ এর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম আন্দোলনের সূত্রপাত হয় কোথায়?
ঢাকা কলেজ।
☑ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বিরোধী আন্দোলন (সেপ্টেম্বর, ১৯৬২):
আইয়ুব খান শিক্ষা সংস্কারের উদ্দেশ্যে ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। তদানীন্তন শিক্ষা সচিব এস.এম.শরীফকে সভাপতি করে গঠিত এগার সদস্যবিশিষ্ট এই কমিশন ‘শরিফ কমিশন’ নামে অভিহিত। কমিশন ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট তার সুপারিশ পেশ করে।
✔ কমিশনের উল্লেখযোগ্য সুপারিশ ছিল:
- তিন বছরের বি.এ কোর্স পদ্ধতি চালু করা (এর আগে ছিল দু’বছরের বি.এ পাস কোর্স)।
- স্কুল-কলেজের সংখ্যা সীমিত রাখা ।
- শিক্ষা ব্যয়ের শতকরা ৮০ ভাগ অভিভাবককে বহন করতে হবে।
- ৬ষ্ঠ শ্রেণি হতে ডিগ্রি স্তর পর্যন্ত ইংরেজিকে বাধ্যতামূলক করা হবে।
✔ কমিশনের এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ বিক্ষুব্ধ হয়।
ঢাকা কলেজে সর্বপ্রথম আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। ঐ কলেজের ছাত্ররা ‘ডিগ্রি স্টুডেন্টস ফোরাম’ নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। এই সংগঠনের নামে ঢাকা শহরের অন্যান্য কলেজের ছাত্ররা আন্দোলন পরিচালনা করে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলনে যোগ দেয়। তখন সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে করা হয় ‘ইস্ট পাকিস্তান স্টুডেন্টস ফোরাম’।
এক পর্যায়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ নেতৃত্বের হাতে চলে যায়। ১৯৬২ ১৭ সেপ্টেম্বর হরতাল আহ্বান করা হয়। হরতালের দিন ছাত্র জনতা মিলিতভাবে রাস্তায় নেমে পড়ে। মিছিলে গুলিবর্ষণ করা হলে বাবুল, বাসকন্টাক্টর গোলাম মোস্তফা ও গৃহভৃত্য ওয়াজিউল্লাহ নিহত হয়। আহত হয় প্রায় আড়াইশ জন। ২৩ সেপ্টেম্বর ১ জন ছাত্র নিহত হয়।
ফলে আন্দোলন ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়ে । তখন রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এই আন্দোলনে অংশ নেননি। ছাত্রদের আন্দোলনের ফলেই সরকার শরীফ কমিশনের সুপারিশ স্থগিত করে। এই আন্দোলনের তাৎপর্য এই যে, পরবর্তীকালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররাই প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়।
১৯৫৬-৫৮ সাল মেয়াদে কার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক পরিষদে ক্ষমতাসীন ছিল?
আতাউর রহমান খান।
পাকিস্তানি শাসনামলের ২৪ বছরের মধ্যে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক ক্ষমতায় ছিল মাত্র ২ বছর (১৯৫৬-৫৮) এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কোয়ালিশন সরকার হিসেবে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল মাত্র ১৩ মাস (১২ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬- ১১ অক্টোবর ১৯৫৭)।
১৯৬২ সালের পাকিস্তান সংবিধানে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য জাতীয় পরিষদে আসন বরাদ্ধ ছিল
৭৫টি।
১৯৬২ সালের সংবিধান এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন করে। জাতীয় পরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫৬ জন (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ৭৫ জন করে (৬টি মহিলা আসন সংরক্ষিত ছিল)। প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫০ এবং সংরক্ষিত মহিলা আসন ৫টি।
মৌলিক গণতন্ত্রীদের ভোটে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হতেন। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের কোনো ক্ষমতা ছিল না।
১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে কয়টি আসন লাভ করে?
২২৩টি।
১৯৫৪ সালের ৮-১২ মার্চ পূর্ব বাংলায় প্রথম প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে মোট আসন ছিলো ৩০৯টি। এর মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন লাভ করে।
ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ মাত্র ৯টি আসন লাভ করে। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি প্রতীক ছিলো নৌকা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করে।
কোয়ালিশন মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধু কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন -
শিল্প।
১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব পাকিস্তানে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ এই মন্ত্রিসভায় শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড দপ্তরের মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু ১৯৫৭ সালের ৩০ মে দলীয় কাজে মনোনিবেশের জন্যে স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
ফজলুল হক নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধু কৃষি ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৫৫ সালে শেখ মুজিবের প্রকাশিত প্রচার পুস্তিকার নাম -
কেন পূর্ববঙ্গের অটনমি চাই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৫ সালে কেন্দ্রীয় গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। শেখ মুজিব এ সময় ‘কেন পূর্ববঙ্গের অটনমি চাই’ শীর্ষক এক পুস্তিকা আওয়ামী লীগের পক্ষ হতে প্রকাশ করে পূর্ব বাংলার উপর উপনিবেশিক শোষণ ও পশ্চিম পাকিস্তানের বাজারে পরিণত করার প্রক্রিয়া সম্বন্ধে জনগণকে সচেতন করতে শুর করেন।
আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি ১৯৫৫ সালের অক্টোবরে দলের নাম হতে ‘মুসলিম’ কথাটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব আনলে প্রায় সর্বসম্মতভাবে তা গৃহীত হয়।
আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয় -
২৩ জুন, ১৯৪৯।
ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজগার্ডেনে এক কর্মী সম্মেলনে পূর্ব বাংলার বাঙালি প্রগতিশীল নেতা ও কর্মী ঢাকায় মিলিত হয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠন করেন। নবগঠিত এই দলের সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।
সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামসুল হক। যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর দলটির নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।
পাকিস্তানে প্রথম সামরিক শাসন জারি করেন কে?
ইস্কান্দার মির্জা।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই স্বেচ্ছাচারী শাসন কায়েম হয়। গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ১৯৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল নাজিমুদ্দিন মন্ত্রিসভাকে বাতিল করেন। মোহাম্মদ আলীকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে স্বেচ্ছাচারিতার ভিত্তিতে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন । ১৯৫৫ সালের ৮ নভেম্বর গণপরিষদ বাতিল করা হয়।
পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠতা মোকাবেলার জন্য পূর্ব ও পশ্চিমের সব প্রদেশ সংযুক্ত করে এক ইউনিট গঠন করে সংখ্যা সাম্যনীতি গ্রহণ করা হয়।জন্মলাভের নয় বছর পর ১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানে প্রথম সংবিধান রচনা করা হয়। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর ইস্কান্দার মির্জা সামরিক শাসন জারি করেন।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খান ২০ দিনের মাথায় তাকে সরিয়ে নিজে ক্ষমতায় আসীন হন এবং সংবিধান বাতিল করে দেন ।
১৯৬২ সালে আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র পদ্ধতি নির্ভর সংবিধান প্রণয়ন করেন। ১৯৬৯ এর মার্চে পূর্ববাংলার গণ আন্দোলনে টিকতে না পেরে সেনাপ্রধান জেনারেল ইয়াহিয়ার হাতে ক্ষমতা দিয়ে তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নেন ।
জেনারেল ইয়াহিয়া পুনরায় সামরিক শাসন জারি করেন। এইভাবে পাকিস্তানের আইন পরিষদকে অকার্যকর এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয় । দীর্ঘ ২৪ বছরই সামরিক চক্র ও আমলারা দেশ শাসন করেন।
ছয়দফা কর্মসূচী প্রথম কোথায় উত্থাপিত হয়?
লাহোরে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় সম্মেলনে।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ ও পরবর্তী তাসখন্দ চুক্তির প্রেক্ষাপটে পশ্চিম পাকিস্তানকেন্দ্রিক নেতারা ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী লাহোরে এক জাতীয় সম্মেলন আহবান করলে বাঙালির জাতীয় মুক্তি ও পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তাহীনতার প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐ সভায় তাঁর ঐতিহাসিক “ছয় দফা” কর্মসূচি উত্থাপন করেন।
কর্মসূচিটি ১৮ মার্চ তারিখে পূর্ব পাকিস্ড়ান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে “আমাদের বাঁচার দাবী- ছয় দফা কর্মসূচী” শিরোনামে ব্যাখ্যাসহকারে বিলি করা হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সহ-সভাপতি ছিলেন-
আলী আমজাদ খান।
১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। এর প্রথম কমিটি: ✔ সভাপতি : মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। ✔ সাধারণ সম্পাদক : শামসুল হক। ✔ সহ সভাপতি : আতাউর রহমান খান, আলী আমজাদ খান, আলী আহমদ খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আবদুস সালাম খান। ✔ যুগ্ম সম্পাদক : শেখ মুজিবুর রহমান (তখন কারাগারে আটক ছিলেন),খন্দকার মোশতাক আহমদ, এ.কে রফিকুল হোসেন ( খায়ের মিয়া)। ✔ ট্রেজারার : ইয়ার মোহাম্মদ খান(যার মালিকানাধীন রোজ গার্ডেনে প্রথম সভার আয়োজন হয়)।
যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধু কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন -
কৃষি, সমবায়।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে যুক্তফ্রন্ট শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিসভা গঠন করে। তিনি নিজে মুখ্যমন্ত্রির দায়িত্ব ছাড়াও অর্থ, রাজস্ব ও স্বরাষ্ট্র বিভাগের দায়িত্ব নেন। মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আবু হোসেন সরকার বিচার, স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার, সৈয়দ আজিজুল হক শিক্ষা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্ব লাভ করেন।
মাত্র ৫৬ দিনের মাথায় যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার অবসান ঘটে। কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫৪ সালের ৩০ মে পূর্ববাংলায় গভর্নরের শাসন ঘোষণা করে। যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভার মেয়াদ ছিল ৫৬ দিন। ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব পাকিস্তানে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধু ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ এই মন্ত্রিসভায় শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড দপ্তরের মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু ১৯৫৭ সালের ৩০ মে দলীয় কাজে মনোনিবেশের জন্যে স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।কৃষি, সমবায়।
ব্যাখ্যা:
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে যুক্তফ্রন্ট শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিসভা গঠন করে। তিনি নিজে মুখ্যমন্ত্রির দায়িত্ব ছাড়াও অর্থ, রাজস্ব ও স্বরাষ্ট্র বিভাগের দায়িত্ব নেন। মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আবু হোসেন সরকার বিচার, স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার, সৈয়দ আজিজুল হক শিক্ষা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্ব লাভ করেন।
মাত্র ৫৬ দিনের মাথায় যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার অবসান ঘটে। কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫৪ সালের ৩০ মে পূর্ববাংলায় গভর্নরের শাসন ঘোষণা করে। যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভার মেয়াদ ছিল ৫৬ দিন। ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব পাকিস্তানে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধু ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ এই মন্ত্রিসভায় শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড দপ্তরের মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু ১৯৫৭ সালের ৩০ মে দলীয় কাজে মনোনিবেশের জন্যে স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
ঐতিহাসিক ছয় দফায় যে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না-
বিচার ব্যবস্থা।
ঐতিহাসিক ছয় দফায় ‘বিচার ব্যবস্থা’ অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
✅ছয় দফা কর্মসূচি: পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক পূর্ব বাংলাকে শোষণের বিরুদ্ধে ছয় দফা কর্মসূচি ছিল তীব্র প্রতিবাদ আর বাঙালির অধিকার আদায়ের সনদ বা মুক্তিসনদ । ছয় দফা কর্মসূচি ছিল-
✔️ ১ম দফা : লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্য সত্যিকার অর্থে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হবে । সরকার হবে সংসদীয় পদ্ধতির । সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সকল প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটে জাতীয় ও প্রাদেশিক আইনসভাগুলো গঠিত হবে ।
✔️ ২য় দফা : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের হাতে থাকবে দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয়। অবশিষ্ট সকল বিষয় প্রদেশের হাতে থাকবে।
✔️ ৩য় দফা : দেশের দুই অঞ্চলের জন্য দুটি পৃথক অথচ সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে অথবা দেশের দুই অঞ্চলের জন্য একই মুদ্রা থাকবে। তবে সংবিধানে এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে এক অঞ্চলের মুদ্রা ও মূলধন অন্য অঞ্চলে পাচার হতে না পারে।
✔️ ৪র্থ দফা : সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা ও কর ধার্য এবং আদায়ের ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে তবে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য আদায় কৃত অর্থের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকার পাবে ।
✔️ ৫ম দফা : বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক মুদ্রার উপর প্রাদেশিক সরকারের ক্ষমতা থাকবে। সকল প্রকার বৈদেশিক চুক্তি ও সহযোগিতার ব্যাপারে প্রাদেশিক সরকার দায়িত্ব পালন করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা যুক্তিযুক্ত হারে উভয় সরকার কর্তৃক মেটানো হবে।
✔️ ৬ষ্ঠ দফা : আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য আঞ্চলিক সরকারগুলো স্বীয় কর্তৃত্বাধীন আধা সামরিক বাহিনী (প্যারা মিলিশিয়া) গঠন ও পরিচালনা করতে পারবে ।