বাংলাদেশের ইতিহাস : প্রাচীন যুগ-২ Flashcards
প্রাচীন কোন জনপদের অবস্থান বাংলাদেশের বাইরে ?
রাঢ়
রাঢ় প্রাচীন বাংলার একটি স্বতন্ত্র ভূ-রাজনৈতিক এলাকা (জনপদ)। বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের (ভাগীরথী নদীর পশ্চিম তীরে) একটি বড় অংশ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। জৈন ঘটনাপঞ্জি আচারঙ্গসূত্রে সর্বপ্রথম রাঢ়/রারহ/লাঢ়/লার-এর উল্লেখ পাওয়া যায়।
এর অপর নাম সূক্ষ্ম।
নিচের কোনটি সমতট জনপদের রাজধানী ছিলো?
বড় কামতা
সমতট জনপদের রাজধানী ছিলো বড় কামতা।
পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার প্রাচীন জনপদের নাম সমতট।
মধ্যবাংলার কিছু অংশ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বর্তমান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কিছু অংশ, বাংলাদেশের বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চল সমতট নামে পরিচিত ছিল।
ত্রিপুরাকে সমতটের প্রধান কেন্দ্র বলা হতো।
সমতটের রাজধানী ছিল বড়কামতা।
বঙ্গ ও গৌড় দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে কত শতকে?
ষষ্ঠ শতকে
বঙ্গ ও গৌড় দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে ষষ্ঠ শতকে।
৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বিশাল গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
সেই অস্থিতিশীল পরিবেশে বাংলাদেশে দুটো স্বাধীন রাষ্ট্রের উত্থান ঘটে।
এর একটি হচ্ছে স্বাধীন ‘বঙ্গ রাষ্ট্র’, অপরটি ‘গৌড় রাজ্য।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সমগ্র দক্ষিণ ও পূর্ব বঙ্গে একটি স্বাধীন রাজ্যের উত্থান ঘটে। বর্তমান পশ্বিমবঙ্গের কিছুঅংশ পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ছিল।
স্বাধীন বঙ্গ রাষ্ট্রের রাজারা তামার পাতে খোদাই করা রাজ নির্দেশ জারি করতেন। এগুলোকে তাম্রশাসন বলা হতো।
এ রকম ৭টি তাম্রশাসন পাওয়া গেছে। স্বাধীন বঙ্গরাজ্যে চন্দ্রগুপ্ত, ধর্মাদিত্য ও সমাচারদেব নামের তিনজন রাজার নাম জানা যায়।
তারা ৫২৫ থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৭৫ বছর রাজত্ব করেন। সম্ভবত চন্দ্ৰগুপ্ত একাই ৩৩ বছর শাসন করেছেন বলে জানা যায়।
বঙ্গের রাজাগণ ‘মহাধিরাজ’ উপাধি ধারণ করতেন।
৬ষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে দাক্ষিণাত্যের চাণক্য রাজ বংশের রাজা কীর্তি বর্মণ দ্বারা বাংলা আক্রান্ত হয়।
বাংলার আদি অধিবাসীগণ কোন ভাষাভাষী ছিলেন?
উত্তর- অষ্ট্রিক।
বাংলার আদি অধিবাসীগণ অষ্ট্রিক ভাষাভাষী ছিলেন।
বাঙালি জাতি সম্পর্কে নৃবিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি একটি মিশ্রিত জাতি এবং এ অঞ্চলে বসবাসকারী আদিতম মানবগোষ্ঠীসমূহের মধ্যে অন্যতম।
জাতিতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর চারটি প্রধান নরগোষ্ঠীর প্রতিটির কোনো না কোনো শাখার আগমন ঘটেছে বাংলায়।
নরগোষ্ঠীগুলি হলো নিগ্রীয়, মঙ্গোলীয়, ককেশীয় ও অষ্ট্রেলীয়।
মনে করা হয় যে, বাংলার প্রাচীন জনগুলির মধ্যে অষ্ট্রিক ভাষীরাই সবচেয়ে বেশি।
সমতট (কুমিল্লা-নোয়াখালি) রাজ্যের উদ্ভব হয় কখন?
৪র্থ শতকে
সমতট (কুমিল্লা-নোয়াখালি) রাজ্যের উদ্ভব হয় ৪র্থ শতকে।
খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতকে সমতট (কুমিল্লা-নোয়াখালি) রাজ্যের উদ্ভব হয়।
এ অঞ্চলে যারা শাসন করেন তারা হলেন বৈন্যগুপ্ত , খড়গ বংশ, চন্দ্র, বর্মণ।
বৈন্যগুপ্ত ৫০৭ খ্রিস্টাব্দে নিজেকে ‘দশ আদিত্য’ ও ‘মহারাজাধিকার’ উপাধি ধারণ করে স্বাধীন বলে ঘোষণা করে ।
সপ্তম শতকের প্রথম দিকে (৬২৫-৭০৫) সমতট অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী খগড় রাজবংশের শাসন চলে।
খড়গদের রাজ্যের রাজধানী ‘কর্মান্ত বসাক’- যা বড় কামতা নামক স্থান বলে অনুমান করা হয়ে থাকে।
প্রাচীন বাংলার কোন অঞ্চলটির পূর্বাংশে অবস্থিত ছিল?
হরিকেল
প্রাচীন বাংলার পূর্বাংশে অবস্থিত ছিল হরিকেল জনপদ।
ত্রিপুরা আদিবাসীরা কোন গোষ্ঠীভুক্ত ছিল?
ভোটচীনীয়।
গারো, কোচ, ত্রিপুরা, চাকমা ইত্যাদি ছিল ভোটচীনীয় গোষ্ঠীভুক্ত।
নেগ্রিটোদের উত্তরসূরী কোনটি?
মুণ্ডা
সাঁওতাল, মুন্ডা, ভীল এরা ছিল নেগ্রিটো জাতিভুক্ত।
অন্যদিকে, গারো, কোচ, ত্রিপুরা, চাকমা ইত্যাদি ছিল ভোটচীনীয় গোষ্ঠীভুক্ত।
বর্তমান বৃহৎ বরিশাল ও ফরিদপুর এলাকা প্রাচীনকালে কোন জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল?
বঙ্গ
ঋগবেদের ‘ঐতরেয় আরণ্যক’ গ্রন্থে প্রথম ‘বঙ্গ’ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়।
বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাস করা ‘বঙ্গ’ নামের এক জাতি হতে ‘বঙ্গ’ নামের উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করা হয়।
বর্তমান জেলাসমূহ: ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও ফরিদপুর ‘বঙ্গ’ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষত্ব: আয়তনে বৃহত্তম ও প্রথম স্বাধীন জনপদ।
প্রাচীন পুন্ড্র নগরীর অংশবিশেষ বাংলাদেশের কোন জেলায় অবস্থিত?
বগুড়া
মহাস্থানগড় এর পূর্বনাম পুন্ড্রনগর। মহাস্থানগড়ের অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় করতোয়া নদীর তীরে।
‘মহাস্থান’ মানে পবিত্র স্থান, এবং ‘গড়’ মানে দুর্গ। আজ থেকে প্রায় ২,৫০০ বছর আগে গড়ে ওঠা এই স্থানটি বৌদ্ধ শিক্ষার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। চীন ও তিব্বত থেকে অনেক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এখানে লেখাপড়ার জন্য আসতেন। এরপর তারা দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তেন এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে।
স্থানটি সম্পর্কে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ তার ভ্রমণকাহিনীতে লিখে গেছেন।
এখানের বিখ্যাত পুরাকীর্তি: ভাসু বিহার, বৈরাগীর ভিটা, গোবিন্দ ভিটা ও খোদার পাথর ভিটা।
প্রাচীন রাঢ় জনপদ অবস্থিত
বর্ধমান
রাঢ় অঞ্চলের অবস্থান: ভাগীরথী নদীর পশ্চিম তীর, বর্ধমান, বাঁকুড়া, দক্ষিণ কোলকাতা (পুরো সীমানা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে)। রাঢ়ের অপর নাম সূহ্ম।
বরেন্দ্রভূমি নামে পরিচিত-
রাজশাহী বিভাগের উত্তর-পশ্চিমাংশ
বরেন্দ্র জনপদের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল: বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী, ও পাবনার কিছু অংশ (গঙ্গা ও করতোয়া নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল)।
বর্তমানে বরেন্দ্র অঞ্চল বলতে দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলার ১২৫টি উপজেলাকে বুঝায়।
ঢাকা প্রাচীন বাংলার কোন জনপদের অন্তর্গত?
বঙ্গ
ঋগবেদের ‘ঐতরেয় আরণ্যক’ গ্রন্থে প্রথম ‘বঙ্গ’ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়।
বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাস করা ‘বঙ্গ’ নামের এক জাতি হতে ‘বঙ্গ’ নামের উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করা হয়।
বর্তমান জেলাসমূহ: ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও ফরিদপুর ‘বঙ্গ’ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষত্ব: আয়তনে বৃহত্তম ও প্রথম স্বাধীন জনপদ।
বঙ্গ নামের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় কোন প্রাচীন গ্রন্থে
ঐতরেয় আরণ্যক
ঐতরেয় আরণ্যক, ঋগ্বেদের অন্তর্গত। শুরুতে এর কোনো লিখিত রূপ ছিল না। গুরু থেকে শিষ্যের কাছে মৌখিকভাবে এ শিক্ষা পৌছে দেয়া হত। ঋষিদের কাছে যা ছিল অত্যন্ত পবিত্র। ঋগ্বেদ শ্রুতি সাহিত্যের অন্তর্ভূক্ত। ঋক, সাম, যজু ও অথর্ব- চারটি বেদের মধ্যে প্রথমটি ঋগ্বেদ। বেদের প্রাথমিক পাঠ বা সংকলনকে সংহিতা বলে। ঐতরেয় আরণ্যক- এ ‘বঙ্গ’ নামের উল্লেখ রয়েছে। যা এখন পর্যন্ত ‘বঙ্গ’ নামের সবচেয়ে প্রাচীন উৎস।
বঙ্গ জনপদের অবস্থান: ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল (বাকেরগঞ্জ) ও পটুয়াখালী। ‘বঙ্গ’ থেকে ‘বাঙালি’ জাতির উৎপত্তি ঘটেছিল।
বাঙালি উপভাষা অঞ্চল কোনটি?
বরিশাল
উপভাষা বলতে বোঝানো হয় দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র অঞ্চলে ব্যবহৃত ভাষাকে বা আঞ্চলিক ভাষাকে বা বিশেষ অঞ্চলের দৈনন্দিন জীবন যাপনের ভাষাকে। বাঙালি উপভাষা অঞ্চল হলো বরিশালি (বরিশাল), খুলনাইয়া (খুলনা), ময়মনসিংহীয় (ময়মনসিংহ), নোয়াখালীয় (নোয়াখালী), ঢাকাইয়া কুট্টি ইত্যাদি।