বাংলাদেশের ইতিহাস : প্রাচীন যুগ-২ Flashcards
প্রাচীন কোন জনপদের অবস্থান বাংলাদেশের বাইরে ?
রাঢ়
রাঢ় প্রাচীন বাংলার একটি স্বতন্ত্র ভূ-রাজনৈতিক এলাকা (জনপদ)। বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের (ভাগীরথী নদীর পশ্চিম তীরে) একটি বড় অংশ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। জৈন ঘটনাপঞ্জি আচারঙ্গসূত্রে সর্বপ্রথম রাঢ়/রারহ/লাঢ়/লার-এর উল্লেখ পাওয়া যায়।
এর অপর নাম সূক্ষ্ম।
নিচের কোনটি সমতট জনপদের রাজধানী ছিলো?
বড় কামতা
সমতট জনপদের রাজধানী ছিলো বড় কামতা।
পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার প্রাচীন জনপদের নাম সমতট।
মধ্যবাংলার কিছু অংশ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বর্তমান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কিছু অংশ, বাংলাদেশের বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চল সমতট নামে পরিচিত ছিল।
ত্রিপুরাকে সমতটের প্রধান কেন্দ্র বলা হতো।
সমতটের রাজধানী ছিল বড়কামতা।
বঙ্গ ও গৌড় দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে কত শতকে?
ষষ্ঠ শতকে
বঙ্গ ও গৌড় দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে ষষ্ঠ শতকে।
৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বিশাল গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
সেই অস্থিতিশীল পরিবেশে বাংলাদেশে দুটো স্বাধীন রাষ্ট্রের উত্থান ঘটে।
এর একটি হচ্ছে স্বাধীন ‘বঙ্গ রাষ্ট্র’, অপরটি ‘গৌড় রাজ্য।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সমগ্র দক্ষিণ ও পূর্ব বঙ্গে একটি স্বাধীন রাজ্যের উত্থান ঘটে। বর্তমান পশ্বিমবঙ্গের কিছুঅংশ পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ছিল।
স্বাধীন বঙ্গ রাষ্ট্রের রাজারা তামার পাতে খোদাই করা রাজ নির্দেশ জারি করতেন। এগুলোকে তাম্রশাসন বলা হতো।
এ রকম ৭টি তাম্রশাসন পাওয়া গেছে। স্বাধীন বঙ্গরাজ্যে চন্দ্রগুপ্ত, ধর্মাদিত্য ও সমাচারদেব নামের তিনজন রাজার নাম জানা যায়।
তারা ৫২৫ থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৭৫ বছর রাজত্ব করেন। সম্ভবত চন্দ্ৰগুপ্ত একাই ৩৩ বছর শাসন করেছেন বলে জানা যায়।
বঙ্গের রাজাগণ ‘মহাধিরাজ’ উপাধি ধারণ করতেন।
৬ষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে দাক্ষিণাত্যের চাণক্য রাজ বংশের রাজা কীর্তি বর্মণ দ্বারা বাংলা আক্রান্ত হয়।
বাংলার আদি অধিবাসীগণ কোন ভাষাভাষী ছিলেন?
উত্তর- অষ্ট্রিক।
বাংলার আদি অধিবাসীগণ অষ্ট্রিক ভাষাভাষী ছিলেন।
বাঙালি জাতি সম্পর্কে নৃবিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি একটি মিশ্রিত জাতি এবং এ অঞ্চলে বসবাসকারী আদিতম মানবগোষ্ঠীসমূহের মধ্যে অন্যতম।
জাতিতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর চারটি প্রধান নরগোষ্ঠীর প্রতিটির কোনো না কোনো শাখার আগমন ঘটেছে বাংলায়।
নরগোষ্ঠীগুলি হলো নিগ্রীয়, মঙ্গোলীয়, ককেশীয় ও অষ্ট্রেলীয়।
মনে করা হয় যে, বাংলার প্রাচীন জনগুলির মধ্যে অষ্ট্রিক ভাষীরাই সবচেয়ে বেশি।
সমতট (কুমিল্লা-নোয়াখালি) রাজ্যের উদ্ভব হয় কখন?
৪র্থ শতকে
সমতট (কুমিল্লা-নোয়াখালি) রাজ্যের উদ্ভব হয় ৪র্থ শতকে।
খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতকে সমতট (কুমিল্লা-নোয়াখালি) রাজ্যের উদ্ভব হয়।
এ অঞ্চলে যারা শাসন করেন তারা হলেন বৈন্যগুপ্ত , খড়গ বংশ, চন্দ্র, বর্মণ।
বৈন্যগুপ্ত ৫০৭ খ্রিস্টাব্দে নিজেকে ‘দশ আদিত্য’ ও ‘মহারাজাধিকার’ উপাধি ধারণ করে স্বাধীন বলে ঘোষণা করে ।
সপ্তম শতকের প্রথম দিকে (৬২৫-৭০৫) সমতট অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী খগড় রাজবংশের শাসন চলে।
খড়গদের রাজ্যের রাজধানী ‘কর্মান্ত বসাক’- যা বড় কামতা নামক স্থান বলে অনুমান করা হয়ে থাকে।
প্রাচীন বাংলার কোন অঞ্চলটির পূর্বাংশে অবস্থিত ছিল?
হরিকেল
প্রাচীন বাংলার পূর্বাংশে অবস্থিত ছিল হরিকেল জনপদ।
ত্রিপুরা আদিবাসীরা কোন গোষ্ঠীভুক্ত ছিল?
ভোটচীনীয়।
গারো, কোচ, ত্রিপুরা, চাকমা ইত্যাদি ছিল ভোটচীনীয় গোষ্ঠীভুক্ত।
নেগ্রিটোদের উত্তরসূরী কোনটি?
মুণ্ডা
সাঁওতাল, মুন্ডা, ভীল এরা ছিল নেগ্রিটো জাতিভুক্ত।
অন্যদিকে, গারো, কোচ, ত্রিপুরা, চাকমা ইত্যাদি ছিল ভোটচীনীয় গোষ্ঠীভুক্ত।
বর্তমান বৃহৎ বরিশাল ও ফরিদপুর এলাকা প্রাচীনকালে কোন জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল?
বঙ্গ
ঋগবেদের ‘ঐতরেয় আরণ্যক’ গ্রন্থে প্রথম ‘বঙ্গ’ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়।
বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাস করা ‘বঙ্গ’ নামের এক জাতি হতে ‘বঙ্গ’ নামের উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করা হয়।
বর্তমান জেলাসমূহ: ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও ফরিদপুর ‘বঙ্গ’ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষত্ব: আয়তনে বৃহত্তম ও প্রথম স্বাধীন জনপদ।
প্রাচীন পুন্ড্র নগরীর অংশবিশেষ বাংলাদেশের কোন জেলায় অবস্থিত?
বগুড়া
মহাস্থানগড় এর পূর্বনাম পুন্ড্রনগর। মহাস্থানগড়ের অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় করতোয়া নদীর তীরে।
‘মহাস্থান’ মানে পবিত্র স্থান, এবং ‘গড়’ মানে দুর্গ। আজ থেকে প্রায় ২,৫০০ বছর আগে গড়ে ওঠা এই স্থানটি বৌদ্ধ শিক্ষার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। চীন ও তিব্বত থেকে অনেক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এখানে লেখাপড়ার জন্য আসতেন। এরপর তারা দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তেন এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে।
স্থানটি সম্পর্কে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ তার ভ্রমণকাহিনীতে লিখে গেছেন।
এখানের বিখ্যাত পুরাকীর্তি: ভাসু বিহার, বৈরাগীর ভিটা, গোবিন্দ ভিটা ও খোদার পাথর ভিটা।
প্রাচীন রাঢ় জনপদ অবস্থিত
বর্ধমান
রাঢ় অঞ্চলের অবস্থান: ভাগীরথী নদীর পশ্চিম তীর, বর্ধমান, বাঁকুড়া, দক্ষিণ কোলকাতা (পুরো সীমানা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে)। রাঢ়ের অপর নাম সূহ্ম।
বরেন্দ্রভূমি নামে পরিচিত-
রাজশাহী বিভাগের উত্তর-পশ্চিমাংশ
বরেন্দ্র জনপদের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল: বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী, ও পাবনার কিছু অংশ (গঙ্গা ও করতোয়া নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল)।
বর্তমানে বরেন্দ্র অঞ্চল বলতে দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলার ১২৫টি উপজেলাকে বুঝায়।
ঢাকা প্রাচীন বাংলার কোন জনপদের অন্তর্গত?
বঙ্গ
ঋগবেদের ‘ঐতরেয় আরণ্যক’ গ্রন্থে প্রথম ‘বঙ্গ’ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়।
বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাস করা ‘বঙ্গ’ নামের এক জাতি হতে ‘বঙ্গ’ নামের উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করা হয়।
বর্তমান জেলাসমূহ: ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও ফরিদপুর ‘বঙ্গ’ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষত্ব: আয়তনে বৃহত্তম ও প্রথম স্বাধীন জনপদ।
বঙ্গ নামের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় কোন প্রাচীন গ্রন্থে
ঐতরেয় আরণ্যক
ঐতরেয় আরণ্যক, ঋগ্বেদের অন্তর্গত। শুরুতে এর কোনো লিখিত রূপ ছিল না। গুরু থেকে শিষ্যের কাছে মৌখিকভাবে এ শিক্ষা পৌছে দেয়া হত। ঋষিদের কাছে যা ছিল অত্যন্ত পবিত্র। ঋগ্বেদ শ্রুতি সাহিত্যের অন্তর্ভূক্ত। ঋক, সাম, যজু ও অথর্ব- চারটি বেদের মধ্যে প্রথমটি ঋগ্বেদ। বেদের প্রাথমিক পাঠ বা সংকলনকে সংহিতা বলে। ঐতরেয় আরণ্যক- এ ‘বঙ্গ’ নামের উল্লেখ রয়েছে। যা এখন পর্যন্ত ‘বঙ্গ’ নামের সবচেয়ে প্রাচীন উৎস।
বঙ্গ জনপদের অবস্থান: ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল (বাকেরগঞ্জ) ও পটুয়াখালী। ‘বঙ্গ’ থেকে ‘বাঙালি’ জাতির উৎপত্তি ঘটেছিল।
বাঙালি উপভাষা অঞ্চল কোনটি?
বরিশাল
উপভাষা বলতে বোঝানো হয় দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র অঞ্চলে ব্যবহৃত ভাষাকে বা আঞ্চলিক ভাষাকে বা বিশেষ অঞ্চলের দৈনন্দিন জীবন যাপনের ভাষাকে। বাঙালি উপভাষা অঞ্চল হলো বরিশালি (বরিশাল), খুলনাইয়া (খুলনা), ময়মনসিংহীয় (ময়মনসিংহ), নোয়াখালীয় (নোয়াখালী), ঢাকাইয়া কুট্টি ইত্যাদি।
বাংলাদেশের একটি প্রাচীন জনপদ-
পুন্ড্র
প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো পুণ্ড্র। বলা হয় যে, ‘পুণ্ড্র’ বলে এক জাতি এ জনপদ গড়ে তুলেছিল। বৈদিক সাহিত্য ও মহাভারতে এ জাতির উল্লেখ আছে।
পুণ্ড্রদের রাজ্যের রাজধানীর নাম পুণ্ড্রনগর। পরবর্তীকালে এর নাম হয় মহাস্থানগড়।
পুন্ড্র অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল: বৃহত্তর বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চল (গঙ্গা-ভাগীরথী হতে করতোয়া)।
বাংলার প্রাচীনতম বন্দরের নাম কী?
তাম্রলিপ্ত
তাম্রলিপ্ত প্রাচীন বাংলার একটি প্রধান বন্দর নগরী। বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত নগরী।
তাম্রলিপ্ত ছিল কলিঙ্গ রাজ্যের প্রধানতম বন্দর। ঐতিহাসিকদের মতে সম্রাট অশোক তাম্রলিপ্ত বন্দর দখল করার জন্যই কালিঙ্গের সাথে যুদ্ধ করেন। এটি দখল করার পর মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রধান নৌ বন্দরে পরিণত হয়।
প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপের বর্তমান নাম কী?
বরিশাল
চন্দ্রদ্বীপ/বাকলা/বাকেরগঞ্জ এর অবস্থানঃ বর্তমান বরিশাল, পিরোজপুর ও বাগেহাটের কিছু অংশ। মধ্যযুগে বর্তমান বরিশাল জেলাই ছিল চন্দ্রদ্বীপের মূল ভূখণ্ড ও প্রাণকেন্দ্র। এ প্রাচীন জনপদটি বলেশ্বর ও মেঘনার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল।
বিশেষত্ব: আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে উল্লেখিত বাকলা বর্তমান বরিশাল জেলার অন্তর্গত।
কোনটি প্রাচীনতম?
মহাস্থান ব্রাহ্মীলিপি
বাংলার মাটিতে প্রাপ্ত প্রাচীনতম লিপিটি হলো ‘মহাস্থানগড় লিপি’ বা ‘মহাস্থানলিপি’। এটি ব্রাহ্মী হরফে লিখিত হবার কারণে ‘মহাস্থানব্রাহ্মী লিপি’ নামেও পরিচিত। ১৯৩১ সালের ৩০ নভেম্বর মাসে বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ের বারু ফকির নামে এক কৃষক জমি চাষ করার সময় এই লিপিটি পান।
বাংলাদেশের প্রাচীনতম নগরকেন্দ্র নয়-
সােনারগাঁও
সোনারগাঁও এর পূর্বনাম সুবর্ণগ্রাম। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা, মা হুয়ান সোনারগাঁও ভ্রমণ করেন। ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ্, গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ এবং বারো ভূঁইয়াদের আমলে বাংলার রাজধানী ছিল সোনারগাঁও।
ফতেহ শাহ মসজিদ, গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের সমাধি, পাঁচ পীরের মাজার, সোনা বিবির মাজার এখানে অবস্থিত।
বাংলাদেশের প্রাচীনতম নগরকেন্দ্র নয়-
সােনারগাঁও
সোনারগাঁও এর পূর্বনাম সুবর্ণগ্রাম। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা, মা হুয়ান সোনারগাঁও ভ্রমণ করেন। ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ্, গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ এবং বারো ভূঁইয়াদের আমলে বাংলার রাজধানী ছিল সোনারগাঁও।
ফতেহ শাহ মসজিদ, গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের সমাধি, পাঁচ পীরের মাজার, সোনা বিবির মাজার এখানে অবস্থিত।
সর্বশেষ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া গেছে-
উত্তর- সুন্দরবনে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে সুন্দরবনে এক থেকে দেড় হাজার বছরের পুরোনো মানব বসতির নিদর্শন পাওয়া গেছে। নিদর্শনটি আবিষ্কৃত হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম এই শ্বাসমূলীয় অরণ্যের পাঁচটি জায়গায়। ইসমে আজম নামে এক গবেষকের ব্যক্তিগত ও একাগ্র অনুসন্ধানে এসব নিদর্শন উদ্ঘাটিত হয়েছে।
প্রখ্যাত বৌদ্ধ পন্ডিত ও দার্শনিক অতীশ দীপঙ্কর বাংলাদেশের বিক্রমপুরের কোন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন?
বজ্রযোগিনী
মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় বজ্রযোগিনী গ্রামটি অবস্থিত। অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের (৯৮০-১০৫৩) স্মৃতিবিজড়িত বজ্রযোগিনী গ্রাম।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন- সুলতানী আমলের সাধক বাবা আদম শাহীর মাজার এবং মুঘল আমলের ইদ্রাকপুর দুর্গ ও সেতু।
অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান ছিলেন বৌদ্ধ পণ্ডিত, ধর্মগুরু ও দার্শনিক। দশম-একাদশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি পণ্ডিত দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান ৯৮০ সালে এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মায়ের নিকট এবং স্থানীয় বজ্রাসন বিহারে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি বিখ্যাত বৌদ্ধগুরু জেতারির নিকট বৌদ্ধ ধর্ম ও শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন।
বৌদ্ধশাস্ত্র, চিকিৎসাবিদ্যা ও কারিগরিবিদ্যা বিষয়ে তিব্বতি ভাষায় অনেক গ্রন্থ রচনা করেন বলে তিব্বতিরা তাঁকে ‘অতীশ’ উপাধিতে ভূষিত করে।
অতীশ দীপঙ্কর অনেক সংস্কৃত ও পালি বই তিব্বতি ভাষায় অনুবাদ করেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নালন্দা ও বিক্রমশীল বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীশ দীপঙ্কর পাঠদান করেন। ৭৩ বছর বয়সে তিব্বতের লাসানগরের কাছে লেথান পল্লীতে ১০৫৩ সালে মারা যান এই পণ্ডিত।
বজ্রযোগিনী গ্রামে তাঁর বাসস্থানকে স্থানীয় অধিবাসীরা বলে থাকেন ‘পণ্ডিতের ভিটা’।
প্রাচীন বাংলায় নিম্নের কোন অঞ্চল বাংলাদেশের পূর্বাংশে অবস্থিত ছিল?
হরিকেল
হরিকেলের অবস্থান: সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম (বাংলার পূর্বাঞ্চল)।
এখানে ভ্রমণ করেন চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ (৭ম শতকে)।
মহাস্থানগড় এক সময় বাংলার রাজধানী ছিল, তখন তার নাম
উত্তর- পুন্ড্রনগর।
পুন্ড্রনগর বাংলাদেশের প্রাচীনতম নগরকেন্দ্র, এর প্রাচীনত্ব খ্রিস্টপূর্ব চার শতকের বলে ধরে নেওয়া হয়। এ নগরের সর্বপ্রথম উল্লেখ (পুদ্নগল) পাওয়া গেছে মহাস্থান ব্রাহ্মী লিপিতে। পুন্ড্রনগরের (গুপ্ত ও গুপ্ত-পরবর্তী যুগে ‘পুন্ড্রবর্ধনপুর’ নামে উল্লিখিত) ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করা হয়েছে বগুড়া জেলার মহাস্থান-এ আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে।
সেন আমল পর্যন্ত না হলেও মৌর্য যুগ হতে পাল আমলের শেষ অবধি পুন্ড্রবর্ধন বিভাগের প্রশাসনিক সদর দফতর হিসেবে পুন্ড্রবর্ধনের অবস্থান অব্যাহত ছিল। গুপ্তযুগে বাংলায় এটি ছিল তাদের শাসনের কেন্দ্র এবং পুন্ড্রবর্ধন ভুক্তির রাজধানী।
করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত পুন্ড্রনগরের সঙ্গে জল ও স্থল পথে বাংলার অন্যান্য অংশের বেশ ঘনিষ্ঠ সংযোগ ছিল এবং সমগ্র প্রাচীন যুগে এটি ব্যবসায়-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে সমৃদ্ধ ছিল। মুসলিম যুগের প্রথম দিকেও বিখ্যাত দরবেশ শাহ সুলতান বলখী অথবা মাহীসওয়ার-এর বাসস্থান হিসেবে এ নগরের গুরুত্ব অব্যাহত ছিল। শাহ সুলতান বলখী প্রাচীন নগরের দক্ষিণ-পূর্বাংশে তাঁর খানকাহ নির্মাণ করেছিলেন।
এখানে রয়েছে বিখ্যাত সাধক শাহ সুলতান বলখির মাজার।
বাংলার আদি অধিবাসী-
নেগ্রিটো
বাংলার আদি অধিবাসী নেগ্রিটো।
সমগ্র বাঙালি জনগোষ্ঠীকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১। অনার্য/আর্যপূর্ব জনগোষ্ঠী ২। আর্য জনগোষ্ঠী।
অনার্য জনগোষ্ঠী ছিল ৪ ভাগে বিভক্ত। যথা- নেগ্রিটো, অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ও ভোটচীনীয়/মঙ্গোলীয়।
প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার বছর পূর্বে অস্ট্রিক জাতি ইন্দোচীন থেকে বাংলায় প্রবেশ করে এবং নেগ্রিটোদের পরাজিত করে।
প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ ছিল কোনটি?
পুন্ড্র
প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ ছিল পুন্ড্র।
পুন্ড্র অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল- বৃহত্তর বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চল (গঙ্গা-ভাগীরথী হতে করতোয়া)।
পুন্ড্রবর্ধন ছিল প্রাচীন বাংলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জনপদ। এর নামকরণ হয়েছে পুন্ড্র জনগোষ্ঠীর নামানুসারে। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে (খ্রি.পূ. ৮ম শতক) প্রথমবারের মতো উপজাতি গোষ্ঠীরূপে পুন্ড্রের উল্লেখ রয়েছে। অন্ধ্র, শবর, পুলিন্দ ও মুতিব জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে পুন্ড্ররা একটি স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার সবচেয়ে শক্তিশালী রাজবংশ ছিলো কোনটি?
চন্দ্র বংশ
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার সবচেয়ে শক্তিশালী রাজবংশ ছিল চন্দ্র বংশ।
সপ্তম থেকে এগারো শতক সময়ের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা একাধিক স্বাধীন রাজবংশের অধীনে ছিলো।
এ সময়ের রাজবংশসমূহ হলো- খড়গ বংশ (সপ্তম শতক), দেব বংশ (অষ্টম শতক), দেব বংশ (অষ্টম শতক), কান্তিদেব বংশ (নবম শতক), চন্দ্র বংশ (দশম শতক) এবং বর্ম বংশ (এগারো শতক)।
এদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজবংশ ছিলো চন্দ্র বংশ। দশম শতকের শুরু থেকে এগারো শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় দেড়শ বছর চন্দ্র বংশের রাজত্ব বিদ্যমান ছিলো।
বর্তমান ঢাকা অঞ্চল প্রাচীন বাংলায় কোন জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিলো?
বঙ্গ জনপদ
প্রাচীন বাংলায় কোন কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা ছিলো না। বাংলা তখন ছোট ছোট কতগুলো অঞ্চলে বিভক্ত ছিলো। এসব অঞ্চল জনপদ নামে পরিচিত।
প্রাচীন বাংলায় মোট ১৬টি জনপদের উল্লেখ পাওয়া যায়। বৃহত্তর ফরিদপুর ও ঢাকা অঞ্চল বঙ্গ জনপদ নামে পরিচিত ছিলো। এই বঙ্গ জনপদ থেকেই বাঙালি জাতির উদ্ভব হয়।
হরিকেল জনপদ : সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চল
সমতট জনপদ : কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল
গৌড় জনপদ : বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর ও রাজশাহীর অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ছিলো।
বাংলায় আর্যদের আগমন শুরু হয় কত খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে
খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দে
- আর্যদের আদি নিবাস ছিলো ইউরাল পর্বতমালার দক্ষিণে বর্তমান ইরান ও কিরগিজস্থানে। সেখান থেকে খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার বছর অব্দে আর্যরা ভারতে আগমন করে।
- আর্যরা বাংলাকে অপবিত্র মনে করতো বিধায় দীর্ঘদিন তারা বাংলা ভূখণ্ডে প্রবেশ করেনি। পরবর্তীতে খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দ থেকে আর্যরা বাংলায় প্রবেশ ও বসতি স্থাপন করতে শুরু করে।
- প্রথমে তারা গাঙ্গেয় উচ্চভূমিতে বসতি স্থাপন করে। পরবর্তীতে গাঙ্গেয় নদী অঞ্চলে আর্যদের প্রভাব বিস্তৃত হলেও এরা বাংলার অনার্য জনগোষ্ঠীর সাথে গভীরভাবে মিশেনি।
- যার কারণে বাঙালি জাতির গঠন প্রক্রিয়ায় অনার্য জাতিগোষ্ঠী ‘অস্ট্রিক ও দ্রাবিড়’দের প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়।
- বাংলায় পাল আমলে আর্য সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে।
আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় বাংলায় কোন জনপদের উপস্থিতির উল্লেখ করা হয়?
গঙ্গারিডি
গ্রিকবীর আলেকজান্ডার খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬-২৭ অব্দে ভারতবর্ষে আক্রমণ করেন। তার সময়ে বাংলায় ‘গঙ্গারিডি’ নামে একটি শক্তিশালী জনপদের উপস্থিতির উল্লেখ করা হয়।
পদ্মা ও ভাগীরথী নদীর মধ্যবর্তী স্থানে ‘গঙ্গারিডি’ রাজ্যের অবস্থান ছিলো। ধারণা করা হয় বঙ্গ জনপদকেই গ্রিকরা গঙ্গারিডি হিসেবে উল্লেখ করেছিলো।
আলেকজান্ডার কর্তৃক ভারত আক্রমণের সময় ‘প্রাসিয়র’ নামে আরেকটি রাজ্যেরও অস্তিত্ব ছিলো।
ইন্দোচীন থেকে বাংলায় প্রবেশ করে নেগ্রিটোদের উৎখাত করে-
নিষাদ জাতি
বাঙালি জাতির প্রধান অংশ গড়ে উঠেছে অস্ট্রিক বা অস্ট্রো এশিয়াটিক গোষ্ঠী থেকে। ইন্দোচীন থেকে বাংলায় প্রবেশ করে নেগ্রিটোদের উৎখাত করে অস্ট্রিক জাতি। এদের ‘নিষাদ জাতি’ বলা হয়। এরপর আসে দ্রাবিড়রা।
অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় জাতির সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছে আর্যপূর্ব বাঙালি জাতি। প্রাক-ঐতিহাসিককালেই আসে নর্ডিক ও মঙ্গোলীয়রা।
বর্তমান কোন জেলা প্রাচীন ‘বরেন্দ্র’ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল?
দিনাজপুর।
প্রাচীন যুগে বাংলা কোন একক বা অখণ্ড রাষ্ট্র ছিলো না।
সমগ্র বাংলা তখন কতগুলো ছোট ছোট অংশে বিভক্ত ছিলো।
এসব ছোট ছোট অংশ জনপদ নামে পরিচিত। প্রাচীন শিলালিপি ও সাহিত্যগ্রন্থে প্রাচীন বাংলায় প্রায় ষোলটি জনপদের উল্লেখ পাওয়া যায়।
বরেন্দ্র ছিল উত্তরবঙ্গের একটি জনপদ। অনুমান করা হয় পুন্ড্রের একটি অংশ জুড়ে বরেন্দ্র এর অবস্থান।
বগুড়া, রাজশাহী ও দিনাজপুর জেলার অনেক অঞ্চল এবং সম্ভবত পাবনা জেলা জুড়ে বরেন্দ্র অঞ্চল বিস্তৃত ছিল।