বাংলাদেশের ইতিহাস : প্রাচীন যুগ -৫ Flashcards
বাংলাদেশের প্রাচীনতম নগরকেন্দ্র কোনটি?
মহাস্থানগড়
বাংলাদেশের প্রাচীনতম নগরকেন্দ্র মহাস্থানগড়।
বগুড়া হতে সাত মাইল দূরে মহাস্থানগড় প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন নগরীর ধ্বংসাবশেষ বলে পণ্ডিতেরা অনুমান করেন। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনের দিক দিয়ে পুণ্ড্রই ছিল প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ।
মহাস্থানগড় এর পূর্বনাম পুন্ড্রনগর। যা ছিল পুণ্ড্রদের রাজ্যের রাজধানী।
এখানে মৌর্য ও গুপ্ত রাজবংশের পুরাকীর্তি রয়েছে। এছাড়াও পাথরের চাকতিতে খোদাই করা লিপি পাওয়া গেছে সম্রাট অশোকের সময়ে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে।
মহাস্থানগড়ের বিখ্যাত পুরাকীর্তি: ভাসু বিহার, বৈরাগীর ভিটা, গোবিন্দ ভিটা ও খোদার পাথর ভিটা।
মেগাস্থিনিসের ‘ইন্ডিকা’ নামক গ্রন্থে কোন জনপদের নাম পাওয়া যায়?
গঙ্গারিডাই।
গঙ্গারিডাই এর অবস্থান: ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গ অঞ্চল বা বর্তমান বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ।
গঙ্গারিডাই এর আরও নানা নাম রয়েছে। গঙ্গাহৃদি, গঙ্গাঋদ্ধি, গঙ্গারাঢ়ী ইত্যাদি।
মেগাস্থিনিসের ‘ইন্ডিকা’তে উল্লেখ রয়েছে গঙ্গারিডি তথা গঙ্গাহৃদির।
মেগাস্থিনিসের বর্ণনা থেকে জানা যায়, গঙ্গার সবচেয়ে পশ্চিম ও সবচেয়ে পূর্ব নদীমুখ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এই জনপদ। যার রাজধানী ছিল চন্দ্রকেতুগড়।
চৈনিক পরিব্রাজক ফা-হিয়েন বাংলায় আসেন যার সময়ে-
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত।
ফা-হিয়েন গুপ্তযুগে সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্যের রাজত্বকালে ভারতীয় উপমহাদেশে আগমন করেন।
ফা-হিয়েন বাংলায় ভ্রমণকারী প্রথম পর্যটক। অন্যদিকে চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এসেছিলেন হর্ষবর্ধনের আমলে এবং মা হুয়ান এসেছিলেন গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ এর আমলে।
বাংলাকে সাম্রাজ্যভুক্ত করা হয়-
মৌর্যদের আমলে।
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম সাম্রাজ্যের নাম মৌর্য সাম্রাজ্য। মৌর্য শাসনের প্রতিষ্ঠাতা- চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য।
সম্রাট অশোক মৌর্য সাম্রাজ্যের তৃতীয় শাসক। তিনি উত্তর বাংলা জয়কারী প্রথম মৌর্য সম্রাট এবং তিনি বাংলাকে মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রদেশে পরিণত করেন।
অশোকের (২৬৯–২৩২খ্রি.পূ.) রাজত্বকালে উত্তর বাংলার বৃহদাংশ মৌর্যদের দখলে গিয়েছিল বলে জোরালো ঐতিহাসিক অভিমত রয়েছে।
প্রখ্যাত বৌদ্ধ পন্ডিত ও দার্শনিক অতীশ দীপঙ্কর বাংলাদেশের বিক্রমপুরের কোন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন?
বজ্রযোগিনী।
মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় বজ্রযোগিনী গ্রামটি অবস্থিত। অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের (৯৮০-১০৫৩) স্মৃতিবিজড়িত বজ্রযোগিনী গ্রাম।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন- সুলতানী আমলের সাধক বাবা আদম শাহীর মাজার এবং মুঘল আমলের ইদ্রাকপুর দুর্গ ও সেতু।
অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান ছিলেন বৌদ্ধ পণ্ডিত, ধর্মগুরু ও দার্শনিক। দশম-একাদশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি পণ্ডিত দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান ৯৮০ সালে এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মায়ের নিকট এবং স্থানীয় বজ্রাসন বিহারে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি বিখ্যাত বৌদ্ধগুরু জেতারির নিকট বৌদ্ধ ধর্ম ও শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন।
বৌদ্ধশাস্ত্র, চিকিৎসাবিদ্যা ও কারিগরিবিদ্যা বিষয়ে তিব্বতি ভাষায় অনেক গ্রন্থ রচনা করেন বলে তিব্বতিরা তাঁকে ‘অতীশ’ উপাধিতে ভূষিত করে।
অতীশ দীপঙ্কর অনেক সংস্কৃত ও পালি বই তিব্বতি ভাষায় অনুবাদ করেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নালন্দা ও বিক্রমশীল বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীশ দীপঙ্কর পাঠদান করেন। ৭৩ বছর বয়সে তিব্বতের লাসানগরের কাছে লেথান পল্লীতে ১০৫৩ সালে মারা যান এই পণ্ডিত।
বজ্রযোগিনী গ্রামে তাঁর বাসস্থানকে স্থানীয় অধিবাসীরা বলে থাকেন ‘পণ্ডিতের ভিটা’।
মহাস্থানগড় এক সময় বাংলার রাজধানী ছিল, তখন তার নাম-
পুন্ড্রনগর।
পুন্ড্রনগর বাংলাদেশের প্রাচীনতম নগরকেন্দ্র, এর প্রাচীনত্ব খ্রিস্টপূর্ব চার শতকের বলে ধরে নেওয়া হয়। এ নগরের সর্বপ্রথম উল্লেখ (পুদ্নগল) পাওয়া গেছে মহাস্থান ব্রাহ্মী লিপিতে। পুন্ড্রনগরের (গুপ্ত ও গুপ্ত-পরবর্তী যুগে ‘পুন্ড্রবর্ধনপুর’ নামে উল্লিখিত) ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করা হয়েছে বগুড়া জেলার মহাস্থান-এ আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে।
সেন আমল পর্যন্ত না হলেও মৌর্য যুগ হতে পাল আমলের শেষ অবধি পুন্ড্রবর্ধন বিভাগের প্রশাসনিক সদর দফতর হিসেবে পুন্ড্রবর্ধনের অবস্থান অব্যাহত ছিল। গুপ্তযুগে বাংলায় এটি ছিল তাদের শাসনের কেন্দ্র এবং পুন্ড্রবর্ধন ভুক্তির রাজধানী।
করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত পুন্ড্রনগরের সঙ্গে জল ও স্থল পথে বাংলার অন্যান্য অংশের বেশ ঘনিষ্ঠ সংযোগ ছিল এবং সমগ্র প্রাচীন যুগে এটি ব্যবসায়-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে সমৃদ্ধ ছিল। মুসলিম যুগের প্রথম দিকেও বিখ্যাত দরবেশ শাহ সুলতান বলখী অথবা মাহীসওয়ার-এর বাসস্থান হিসেবে এ নগরের গুরুত্ব অব্যাহত ছিল। শাহ সুলতান বলখী প্রাচীন নগরের দক্ষিণ-পূর্বাংশে তাঁর খানকাহ নির্মাণ করেছিলেন।
এখানে রয়েছে বিখ্যাত সাধক শাহ সুলতান বলখির মাজার।
মাৎস্যন্যায়’ বাংলার কোন সময়কাল নির্দেশ করে?
৭ম-৮ম শতক।
শশাঙ্কের মারা যাওয়ার পর দীর্ঘদিন বাংলায় কোনো যোগ্য শাসক ছিল না। ফলে রাজ্যে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা দেখা দেয়। সামন্ত রাজারা প্রত্যেকেই বাংলার রাজা হওয়ার কল্পনায় অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকেন। এ অরাজকতাপূর্ণ সময় (৭ম-৮ম শতক) কে আখ্যায়িত করা হয়েছে ‘মাৎস্যন্যায়’ বলে। পাল বংশের রাজত্ব শুরু হওয়ার সাথে সাথে এ অবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটে।
তালপাতার পুথিঁচিত্র কোন যুগের নিদর্শন?
পাল যুগ।
তালপাতার পুথিঁচিত্র পাল যুগের নিদর্শন।
শশাঙ্ক পরবর্তী বাংলায় অরাজকতার যুগের অবসান ঘটিয়ে গােপাল বাংলার সিংহাসনে আরােহণ করেন এবং পাল বংশের শাসনের সূচনা করেন।
পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা: গোপাল (৭৫৬-৭৮১)।
পাল সাম্রাজ্যের বিশেষত্ব হচ্ছে এটি প্রথম বংশানুক্রমিক রাজবংশ এবং বাংলার দীর্ঘস্থায়ী (৪০০ বছর) রাজবংশ।
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার সবচেয়ে শক্তিশালী রাজবংশ ছিলো কোনটি?
চন্দ্র বংশ।
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার সবচেয়ে শক্তিশালী রাজবংশ ছিল চন্দ্র বংশ।
সপ্তম থেকে এগারো শতক সময়ের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা একাধিক স্বাধীন রাজবংশের অধীনে ছিলো।
এ সময়ের রাজবংশসমূহ হলো- খড়গ বংশ (সপ্তম শতক), দেব বংশ (অষ্টম শতক), দেব বংশ (অষ্টম শতক), কান্তিদেব বংশ (নবম শতক), চন্দ্র বংশ (দশম শতক) এবং বর্ম বংশ (এগারো শতক)।
এদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজবংশ ছিলো চন্দ্র বংশ। দশম শতকের শুরু থেকে এগারো শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় দেড়শ বছর চন্দ্র বংশের রাজত্ব বিদ্যমান ছিলো।
আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় বাংলায় কোন জনপদের উপস্থিতির উল্লেখ করা হয়?
গঙ্গারিডি।
গ্রিকবীর আলেকজান্ডার খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬-২৭ অব্দে ভারতবর্ষে আক্রমণ করেন। তার সময়ে বাংলায় ‘গঙ্গারিডি’ নামে একটি শক্তিশালী জনপদের উপস্থিতির উল্লেখ করা হয়।
পদ্মা ও ভাগীরথী নদীর মধ্যবর্তী স্থানে ‘গঙ্গারিডি’ রাজ্যের অবস্থান ছিলো। ধারণা করা হয় বঙ্গ জনপদকেই গ্রিকরা গঙ্গারিডি হিসেবে উল্লেখ করেছিলো।
আলেকজান্ডার কর্তৃক ভারত আক্রমণের সময় ‘প্রাসিয়র’ নামে আরেকটি রাজ্যেরও অস্তিত্ব ছিলো।
প্রাচীন বাংলার স্বাধীন গৌড় রাজ্যের স্থপতি কে?
শশাঙ্ক।
খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে উত্তর বাংলা, পশ্চিম বাংলার উত্তরাংশ এবং মগধ গৌড় জনপদ রূপে পরিচিতি লাভ করে।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন পরবর্তী বিশৃঙ্খল অবস্থার সুযোগ গ্রহণ করে শশাঙ্ক ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে গৌড় অঞ্চল অধিকার করে ‘স্বাধীন গৌড় রাজ্য’ স্থাপন করেন।
তার রাজধানী ছিলো কর্ণসুবর্ণ। ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত শশাঙ্ক গৌড় রাজ্যের অধিপতি ছিলেন।
প্রথম চীনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন ভারতবর্ষে আসেন
গুপ্ত যুগে।
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে চীনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন ভারতবর্ষে আসেন। তিনি ১০ বছর ভারতে অবস্থানকালে তাঁর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ৭টি গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে ‘ফো-কুয়ো-কিং’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সময়ে গ্রিক পরিব্রাজক মেগাস্থিনিস ভারতবর্ষে আগমন করে ভারতের শাসন প্রকৃতি, ভৌগোলিক বিবরণ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইন্ডিকা’তে লিপিবদ্ধ করেন।
হিউয়েন সাং ছিলেন চীন দেশীয় বৌদ্ধ পণ্ডিত। হর্ষবর্ধনের দরবারে তিনি আট বছর কাটান।
পাল বংশের কোন রাজার শাসনামলে ‘কৈবর্ত বিদ্রোহ’ সংঘটিত হয়?
দ্বিতীয় মহীপাল।
তৃতীয় বিগ্রহপালের মৃত্যুর পর তার পুত্র দ্বিতীয় মহীপাল (১০৭৫-১০৮০) সিংহাসনে বসেন।
তাঁর সময় বরেন্দ্র অঞ্চলে বিদ্রোহ শুরু হয় যা ‘কৈবর্ত্য বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। এর নেতা ছিলেন দিব্য।
তিনি দ্বিতীয় মহীপালকে হত্যা করেন এবং বরেন্দ্র দখল করেন।
স্বাধীন গৌড় রাজ্যের উদ্ভব ঘটে কোন শতকে?
ষষ্ঠ।
ষষ্ঠ শতকের শেষের দিকে গৌড়ের পরবর্তী গুপ্তবংশীয় রাজাগণ দুর্বল হয়ে পড়েন। এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে সামন্তরাজা শশাঙ্ক ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে গৌড় অঞ্চলে ক্ষমতা দখল করে স্বাধীন গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
স্বাধীন গৌড়রাজ্য বাংলার উত্তর, উত্তর পশ্চিমাংশ ও মগধে বিস্তৃত ছিল।
বিখ্যাত বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র ‘বিক্রমশীল বিহার’ নির্মাণ করেন-
ধর্মপাল।
পাল বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন - ধর্মপাল। তিনি প্রায় ৪০ বছর (৭৮১-৮২১) রাজত্ব করেন।
পাল সাম্রাজ্য এবং প্রতিপত্তি বিস্তারে ধর্মপালের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাই প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি ‘বিক্রমশীলদেব’ উপাধি গ্রহণ করেন।
ভাগলপুরের ২৪ মাইল পূর্বে তিনি ‘বিক্রমশীল বিহার’ নামে বৌদ্ধ বিহার বা মঠ নির্মাণ করেন।
নওগাঁ জেলার পাহাড়পুর নামক স্থানে বিখ্যাত বৌদ্ধ বিহার সোমপুর বিহারেরও প্রতিষ্ঠাতা রাজা ধর্মপাল। এখনো পর্যন্ত সোমপুর বিহার ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহার হিসেবে স্বীকৃত। এটিকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐহিত্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
বাংলার প্রথম রাজা ছিলেন
শশাঙ্ক।
বাংলার প্রথম রাজা ছিলেন শশাঙ্ক।
শশাঙ্ক গৌড়ের রাজা ছিলেন। তিনি ৬০৬ সালে স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।শশাঙ্ক পুরো বাংলাকে একত্র করে শাসন করেছিলেন। এজন্য উনাকে বাংলার প্রাচীন বাংলার প্রথম সার্বভৌম শাসক বলা হয়।
সমগ্র বাংলায় নিজ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করার পর কোন শাসক ‘গৌড়েশ্বর’ উপাধি গ্রহণ করেন?
লক্ষণ সেন।
৬০ বছর বয়সে লক্ষণ সেন বাংলার শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন।
তিনি কামরূপ, কলিঙ্গ ও কাশি জয় করেন। তিনি গৌড় জয় করেন।
সমগ্র বাংলায় নিজ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করার পর লক্ষণ সেন ‘গৌড়েশ্বর’ উপাধি গ্রহণ করেন।
তাঁর নামানুসারে গৌড়ের রাজধানী লক্ষণাবতী নেওয়া হয়।
গোপালের মৃত্যুর পর তার পুত্র ধর্মপাল বাংলার নৃপতি হন। পাল সাম্রাজ্য এবং প্রতিপত্তি বিস্তারে ধর্মপালের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি ‘বিক্রমশীলদেব’ উপাধি গ্রহণ করেন।
বাংলার প্রথম স্বাধীন ও সার্বভৌম কোন রাজা শৈব ধর্মের অনুসারী ছিলেন?
শশাঙ্ক।
বাংলার প্রথম স্বাধীন ও সার্বভৌম রাজা শশাঙ্ক শৈব ধর্মের অনুসারী ছিলেন।
বিখ্যাত চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং শৈব ধর্মের অনুসারী রাজা শশাঙ্ককে বৌদ্ধধর্ম বিদ্বেষী / বৌদ্ধ ধর্মের নিগ্রহকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
শশাঙ্ক একজন সুশাসক ছিলেন। তার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদের নিকটবর্তী কর্ণসুবর্ণ। তার আমলে তাম্রলিপ্ত বন্দর গুরুত্ব লাভ করে।
মৌর্য সাম্রাজের রাজধানী ছিল
পাটলীপুত্র।
আলেকজান্ডারের ভারত ত্যাগের মাত্র দুই বছর পর ৩২১ খ্রিষ্টপূর্বে মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ভারতের এক বিশাল অঞ্চলের ওপর মৌর্য বংশের প্রভুত্ব স্থাপন করেন। তার শাসনামলে পাটলিপুত্র ছিল রাজধানী।
উত্তর বাংলায় মৌর্য শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে (২৬৯-২৩২ খ্রিষ্টপূর্ব)। অঞ্চলটি মৌর্যদের একটি প্রদেশে পরিণত হয়েছিল।
প্রাচীন পুণ্ড্রনগর ছিল এ প্রদেশের রাজধানী
কে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন?
ইন্দ্রগুপ্ত।
দেবপাল বিদ্যা ও বিদ্বানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধ পণ্ডিতগণ তাঁর রাজসভা অলঙ্কৃত করতেন। দেবপালের পৃষ্ঠপোষকতায় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় তখন সমগ্র এশিয়ায় বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রধান প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।
বৌদ্ধশাস্ত্রে পারদর্শী ইন্দ্রগুপ্ত নামক ব্রাহ্মণকে তিনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বা অধ্যক্ষ নিযুক্ত করেছিলেন। এ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই তার শাসন আমলে উত্তর-ভারতে প্রায় হারিয়ে যাওয়া বৌদ্ধধর্ম পুনরায় সজীব হয়ে ওঠে।
কৈবর্ত্য বিদ্রোহের সময় সেন বংশের কোন রাজা রামপালকে সাহায্য করেন?
বিজয় সেন।
হেমন্ত সেনের মৃত্যুর পর তার পুত্র বিজয় সেন (১০৯৮-১১৬০ খ্রিষ্টাব্দে) সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার সুদীর্ঘ রাজত্বকালই সেন বংশের শাসনের শক্তিশালী ভিত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিল।
কৈবর্ত্য বিদ্রোহের সময় বিজয় সেন রামপালকে সাহায্য করেন। বরেন্দ্র উদ্ধারে রামপালকে সাহায্য করার বিনিময়ে বিজয় সেন স্বাধীনতার স্বীকৃতি পান।
রাঢ় শূর বংশের রাজকন্যা বিলাসদেবীকে তিনি বিয়ে করেন এবং বৈবাহিক আত্মীয়তার সূত্র ধরে রাঢ় বিজয় সেনের অধিকারে আসে।
সেন বংশের কোন শাসক সুপণ্ডিত হিসেবে পরিচিত?
বল্লাল সেন।
সেন বংশে বল্লাল সেন ছিলেন অত্যন্ত সুপণ্ডিত। বিদ্যা ও বিদ্বানের প্রতি তাঁর যথেষ্ট অনুরাগ ছিল। তিনি বেদ, স্মৃতি, পুরাণ প্রভৃতি শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছিলেন।
কবি বা লেখক হিসেবে সংস্কৃত সাহিত্যে তাঁর দান অপরিসীম। তিনি ‘দানসাগর’ ও ‘অদ্ভুতসাগর’ নামে দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। অবশ্য ‘অদ্ভুতসাগর’ গ্রন্থের অসমাপ্ত অংশ তাঁর পুত্র লক্ষণ সেন সম্পূর্ণ করেছিলেন।
গুপ্ত যুগে কোন পরিব্রাজক ভারতবর্ষে আসেন-
ফা-হিয়েন।
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে চীনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন ভারতবর্ষে আসেন। তিনি ১০ বছর ভারতে অবস্থানকালে তাঁর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ৭টি গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে ‘ফো-কুয়ো-কিং’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সময়ে গ্রিক পরিব্রাজক মেগাস্থিনিস ভারতবর্ষে আগমন করে ভারতের শাসন প্রকৃতি, ভৌগোলিক বিবরণ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইন্ডিকা’তে লিপিবদ্ধ করেন।
হিউয়েন সাং ছিলেন চীন দেশীয় বৌদ্ধ পণ্ডিত। হর্ষবর্ধনের দরবারে তিনি আট বছর কাটান।
বিখ্যাত বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র ‘বিক্রমশীল বিহার’ নির্মাণ করেন-
ধর্মপাল।
পাল বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন - ধর্মপাল। তিনি প্রায় ৪০ বছর (৭৮১-৮২১) রাজত্ব করেন।
পাল সাম্রাজ্য এবং প্রতিপত্তি বিস্তারে ধর্মপালের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাই প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি ‘বিক্রমশীলদেব’ উপাধি গ্রহণ করেন।
ভাগলপুরের ২৪ মাইল পূর্বে তিনি ‘বিক্রমশীল বিহার’ নামে বৌদ্ধ বিহার বা মঠ নির্মাণ করেন।
নওগাঁ জেলার পাহাড়পুর নামক স্থানে বিখ্যাত বৌদ্ধ বিহার সোমপুর বিহারেরও প্রতিষ্ঠাতা রাজা ধর্মপাল। এখনো পর্যন্ত সোমপুর বিহার ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহার হিসেবে স্বীকৃত। এটিকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐহিত্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।