বাংলাদেশের ইতিহাস - প্রাচীনযুগ ১ Flashcards
বাংলার আদি অধিবাসীগণ কোন ভাষাভাষী ছিলেন?
অস্ট্রিক
বাংলার আদি জনগোষ্ঠীর ভাষা ছিল– অস্ট্রিক।
প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার বছর পূর্বে অস্ট্রিক জাতি ইন্দোচীন থেকে বাংলায় প্রবেশ করে । অস্ট্রিক গোষ্ঠী থেকে বাঙালি জাতির প্রধান অংশ গড়ে উঠেছে বলে মনে করা হয়।
খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে আর্যদের আগমনের ফলে ধীরে ধীরে অস্ট্রিক ভাষা হারিয়ে যেতে থাকে এবং বিবর্তনের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়।
পিরোজপুর জেলা কোন প্রাচীন জনপদের অন্তর্ভুক্ত?
চন্দ্ৰদ্বীপ
পিরোজপুর জেলা প্রাচীন ‘চন্দ্রদ্বীপ’ জনপদের অন্তর্ভুক্ত।
প্রাচীনকালে বর্তমান বাংলাদেশ কোনো ‘অখণ্ড’ রাষ্ট্র গড়ে ওঠেনি। ছোট ছোট অনেকগুলো অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। ঐতিহাসিকরা এগুলোকে ঠিক রাজ্য বা রাষ্ট্র না বলে ‘জনপদ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বরিশাল, পটুয়াখালি, বাগেরহাট, খুলনা ও গোপালগঞ্জ অঞ্চল প্রাচীন ‘চন্দ্রদ্বীপ’ জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বঙ্গ: ‘বঙ্গ’-র সঙ্গে ‘আল’ যুক্ত হয়ে ‘বাঙ্গাল’ সেখান থেকে ‘বাংলা’ নামের উৎপত্তি। ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, ফরিদপুর অঞ্চল, ঢাকা, বৃহত্তর বরিশাল (প্রাচীন বাকেরগঞ্জ) ও পটুয়াখালী অঞ্চল এই অঞ্চলের অন্তর্গত।
সমতট: রাজধানী – বড়কামতা। কুমিল্লা ও নোয়াখালী এই অঞ্চলের অন্তর্গত।
হরিকেল: শ্রীহট্ট (সিলেট) ও চট্টগ্রাম।
হরিকেল জনপদ-
সিলেটের সমার্থক।
হরিকেল জনপদ সিলেটের সমার্থক। প্রাচীনকালে বর্তমান বাংলাদেশ কোনো ‘অখণ্ড’ রাষ্ট্র গড়ে ওঠেনি। ছোট ছোট অনেকগুলো অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। ঐতিহাসিকরা এগুলোকে ঠিক রাজ্য বা রাষ্ট্র না বলে ‘জনপদ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সিলেট (শ্রীহট্ট) ও চট্টগ্রাম অঞ্চল প্রাচীন ‘হরিকেল’ জনপদের অংশ ছিল।
বগুড়া (মহাস্থানগড়), রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চল ‘পুণ্ড্র’ জনপদের অন্তর্গত ছিল।
ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, ফরিদপুর অঞ্চল, ঢাকা, বৃহত্তর বরিশাল (প্রাচীন বাকেরগঞ্জ) ও পটুয়াখালী অঞ্চল ‘বঙ্গ’ অঞ্চলের অন্তর্গত। ‘বঙ্গ’ বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন জনপদ।
সমতট: রাজধানী – বড়কামতা। কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল এই জনপদের অংশ ছিল।
বাংলার সর্বপ্রাচীন জনপদের নাম কী?
পুন্ড্র
বাংলার সর্বপ্রাচীন ও সমৃদ্ধ জনপদের নাম ‘পুণ্ড্র’।
বগুড়া (মহাস্থানগড়), রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চল এই জনপদের অন্তর্গত ছিল।
প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল বগুড়ার মহাস্থানগড় (পুণ্ড্রনগর/পুণ্ড্রবর্ধন)। মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে প্রাচীন পুণ্ড্র জনপদের স্বাধীন সত্তা বিলুপ্ত হয়।
গৌড়: রাজধানী-কর্ণসুবর্ণ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও পশ্চিবঙ্গের মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়া, বিহার ও উড়িষ্যা।)
হরিকেল: শ্রীহট্ট (সিলেট) ও চট্টগ্রাম
প্রাচীন বাংলার নিম্নের কোন অঞ্চল বাংলাদেশের পূর্বাংশে অবস্থিত ছিল?
হরিকেল
হরিকেল জনপদের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল: সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম (বাংলার পূর্বাঞ্চল)। এখানে ভ্রমণ করেন চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ (৭ম শতকে)।
উয়ারি বটেশ্বর’ কী?
প্রাচীন জনপদ
উয়ারী-বটেশ্বর ছিল গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের অংশ। আড়াই হাজার বছর আগে নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরে অনেক সমৃদ্ধ সভ্যতা ছিল।
উয়ারী বটেশ্বর নরসিংদীর বেলাব উপজেলার উয়ারী ও বটেশ্বর গ্রামে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ বা কয়রা নদীর তীরে অবস্থিত ছিল।
এটি ছিল নদী বন্দর ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র।
বরেন্দ্র বলতে বোঝায় কোনটি?
উত্তরবঙ্গ
বরেন্দ্র জনপদের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল: বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী, ও পাবনার কিছু অংশ (গঙ্গা ও করতোয়া নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল)।
বর্তমানে বরেন্দ্র অঞ্চল বলতে দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলার ১২৫টি উপজেলাকে বুঝায়।
রাজতরঙ্গিনী’ ইতিহাস গ্রন্থের রচয়িতা কে?
কলহন
‘রাজতরঙ্গিনী’ ইতিহাস গ্রন্থের রচয়িতা হলেন কলহন। তিনি কাশ্মীরের রাজা জয়সিংহের সভাকবি ছিলেন বলে জানা যায়।
কলহনের রাজতরঙ্গিনী কথার অর্থ “রাজাদের নদী”। এই ঐতিহাসিক গ্রন্থটি উত্তর-পশ্চিম ভারতীয় উপমহাদেশের, বিশেষ করে কাশ্মীরের রাজাদের একটি ছন্দময় কিংবদন্তি এবং ঐতিহাসিক উপাদান।
বাংলাদেশের মাটি খুঁড়ে প্রাচীন জনপদ আবিষ্কার হয়েছে কোথায়?
নাটেশ্বর
বাংলাদেশে মাটির স্তূপ ও গড় অঞ্চল খনন করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে প্রাচীন বাংলার কিছু জনপদ আবিষ্কৃত হয়।
এগুলো হলো- রাজশাহীর পাহাড়পুর, কুমিল্লার ময়নামতি, বগুড়ার মহাস্থানগড়, নরসিংদীর উয়ারি বটেশ্বর এবং মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর সভ্যতা।
হরিকেল জনপদের সময়কাল-
৭ম শতক
হরিকেল: শ্রীহট্ট (সিলেট) ও চট্টগ্রাম।
চীনা ভ্রমণকারী ইিসং বলেছেন, হরিকেল ছিল পূর্ব ভারতের শেষ সীমায়।
আবার কারো কারো লিপিতে হরিকেলের যে পরিচয় পাওয়া যায়, তাতে বর্তমান চট্টগ্রামেরও অংশ খুঁজে পাওয়া যায়।
সব তথ্য পর্যালোচনা করে ধরে নেওয়া যায় যে পূর্বে শ্রীহট্ট (সিলেট) থেকে চট্টগ্রামের অংশবিশেষ পর্যন্ত হরিকেল জনপদে বিস্তৃত ছিল। সপ্তম ও অষ্টম শতক থেকে ১০ ও ১১ শতক পর্যন্ত হরিকেল একটি স্বতন্ত্র রাজ্য ছিল।
বাকেরগঞ্জ বলতে কোনটিকে বোঝায় না?
বগুড়া
চন্দ্রদ্বীপ/বাকলা/বাকেরগঞ্জ এর অবস্থানঃ বর্তমান বরিশাল, পিরোজপুর ও বাগেহাটের কিছু অংশ। মধ্যযুগে বর্তমান বরিশাল জেলাই ছিল চন্দ্রদ্বীপের মূল ভূখণ্ড ও প্রাণকেন্দ্র। এ প্রাচীন জনপদটি বলেশ্বর ও মেঘনার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল।
বিশেষত্ব: ‘আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থে উল্লেখিত বাকলা বর্তমান বরিশাল জেলার অন্তর্গত।
উয়ারী-বটেশ্বর কোথায় অবস্থিত?
নরসিংদি
উয়ারী-বটেশ্বর ছিল গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের অংশ। আড়াই হাজার বছর আগে নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরে অনেক সমৃদ্ধ সভ্যতা ছিল।
উয়ারী বটেশ্বর নরসিংদীর বেলাব উপজেলার উয়ারী ও বটেশ্বর গ্রামে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ বা কয়রা নদীর তীরে অবস্থিত ছিল।
এটি ছিল নদী বন্দর ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র।
তাম্রলিপ্ত একটি-
নৌবন্দর
তাম্রলিপ্ত প্রাচীন বাংলার একটি প্রধান বন্দর নগরী। বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত নগরী।
তাম্রলিপ্ত ছিল কলিঙ্গ রাজ্যের প্রধানতম বন্দর। ঐতিহাসিকদের মতে সম্রাট অশোক তাম্রলিপ্ত বন্দর দখল করার জন্যই কালিঙ্গের সাথে যুদ্ধ করেন। এটি দখল করার পর মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রধান নৌ বন্দরে পরিণত হয়।
মেগাস্থিনিসের ‘ইন্ডিকা’ নামক গ্রন্থে কোন জনপদের নাম পাওয়া যায়?
গঙ্গারিডাই
গঙ্গারিডাই এর অবস্থান: ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গ অঞ্চল বা বর্তমান বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ।
গঙ্গারিডাই এর আরও নানা নাম রয়েছে। গঙ্গাহৃদি, গঙ্গাঋদ্ধি, গঙ্গারাঢ়ী ইত্যাদি।
মেগাস্থিনিসের ‘ইন্ডিকা’তে উল্লেখ রয়েছে গঙ্গারিডি তথা গঙ্গাহৃদির।
মেগাস্থিনিসের বর্ণনা থেকে জানা যায়, গঙ্গার সবচেয়ে পশ্চিম ও সবচেয়ে পূর্ব নদীমুখ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এই জনপদ। যার রাজধানী ছিল চন্দ্রকেতুগড়।
প্রাচীন গৌড় নগরীর অংশবিশেষ কোন জেলায় রয়েছে?
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
গৌড় নগরীর অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল: চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বর্ধমান ও নদীয়া জেলা।
গৌড়ের প্রথম ধারণা পাওয়া যায়: পাণিনির গ্রন্থে।
রাজধানী: কর্ণসুবর্ণ, মুর্শিদাবাদ।