Chapter-6: Structure Of Atoms Flashcards
পদার্থের গঠন সম্পর্কে ডেমোক্রিটাসের মতবাদ ব্যাখ্যা কর ।
গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দে সর্বপ্রথম পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা নিয়ে মতবাদ পোষণ করেন। তাঁর মতে, সকল পদার্থই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবিভাজ্য (যা আর ভাঙা যায় না) কণা দ্বারা গঠিত। তিনি এই ক্ষুদ্রতম কণার নাম দেন পরমাণু বা এটম (Atom)।
পদার্থের গঠন সম্পর্কে প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের মতবাদ
ব্যাখ্যা কর।
পরমাণুর গঠন সম্পর্কে দার্শনিক প্লেটো (Plato) এবং অ্যারিস্টটল (Aristotle) ডেমোক্রিটাসের মতবাদের সাথে দ্বিমত
পোষণ করেন। অ্যারিস্টটলের মতে, পদার্থসমূহ নিরবিচ্ছিন্ন। (Continuous); একে যতই ভাঙা হোক না কেন, পদার্থের কণাগুলো
ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতর হতে থাকবে।
পদার্থের গঠন সম্পর্কিত অ্যারিস্টটলের মতবাদ পরিত্যক্ত হয়
কেন?
১৮০৩ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী জন ডাল্টন (John Dalton) পরীক্ষালব্ধ তথ্যের উপর ভিত্তি করে পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা সম্পর্কে বলেন- পরমাণু হলো মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা এবং একে আর ভাঙা যায় না। ডাল্টনের এ মতবাদ সকলে গ্রহণ করে। ফলে অ্যারিস্টটলের মতবাদটি পরিত্যক্ত হয়।
পরমাণু অবিভাজ্য নয় কেন?
পরমাণু
বিভাজ্য। এরা ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন দ্বারা গঠিত। যেহেতু
পরমাণুকে ভাঙা হলে ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের মত ক্ষুদ্রতর
কণিকা পাওয়া যায়, তাই পরমাণুকে অবিভাজ্য বলা যায় না।
বিজ্ঞানী রাদারফোর্ডের নিউক্লিয়াস সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাটি
তুলে ধর।
বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড ও তাঁর সহকর্মীরা একটি পরীক্ষা করেন, যা পরমাণুর গঠন সম্পর্কে ভালো ধারণা দেয়। পরীক্ষালব্ধ ফল থেকে
রাদারফোর্ড বলেন যে, পরমাণুতে ধনাত্মক আধান ও ভর একটি ক্ষুদ্র
জায়গায় আবদ্ধ। এই জায়গাটি পরমাণুর কেন্দ্রে অবস্থিত। তাই
তিনি এর নাম দেন নিউক্লিয়াস (Nucleus)। এভাবে সর্বপ্রথম তিনি
নিউক্লিয়াসের ধারণা প্রদান করেন ।
বিজ্ঞানী রাদারফোর্ডের পরীক্ষালব্ধ ফলাফল ব্যাখ্যা কর ।
পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে রাদারফোর্ড বলেন যে, পরমাণুতে ধনাত্মক আধান ও ভর একটি ক্ষুদ্র জায়গায় আবদ্ধ। এই জায়গাটি পরমাণুর কেন্দ্রে অবস্থিত। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন যে, পরমাণুর বেশিরভাগ জায়গা ফাঁকা, আর ঋণাত্মক আধানযুক্ত কণার তেমন
কোনো ভর নেই এবং তারা নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।
রাদারফোর্ডের মডেল সৌরজগতের মতো— ব্যাখ্যা কর।
বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড ব্যাখ্যা দেন যে, পরমাণুর বেশিরভাগ জায়গা ফাঁকা, আর ঋণাত্মক আধানযুক্ত কণার তেমন কোনো ভর নেই এবং তারা নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। বিষয়টি অনেকটা • সৌরজগতের সূর্যের চারদিকে গ্রহের প্রদক্ষিণ এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই রাদারফোর্ড মডেলকে সৌরজগতের সাথে তুলনা করা হয়।
পরমাণুর গঠন ব্যাখ্যা কর।
পরমাণু ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের সমন্বয়ে গঠিত। পরমাণুর কেন্দ্রে রয়েছে নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক আধানযুক্ত প্রোটন ও আধান নিরপেক্ষ নিউট্রন রয়েছে। পরমাণুর ভরের প্রায়
পুরোটাই নিউক্লিয়াসে থাকে। ঋণাত্মক আধানযুক্ত ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরে।
পরমাণুর ধর্মের পার্থক্য দেখা যায় কেন?
পরমাণু খুব ক্ষুদ্র কণা। তাই এর গঠন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সহজ নয়। তবে বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পরমাণুর গঠন এবং ধর্ম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গেছে। মূলত
পরমাণুতে ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের সংখ্যার ভিন্নতার কারণে
পরমাণুর ধর্মে পার্থক্য দেখা যায় ।
হাইড্রোজেন গ্যাসের পরমাণু থেকে অক্সিজেন গ্যাসের পরমাণু ভিন্ন কেন?
প্রতিটি মৌলের আলাদা আলাদা পরমাণু রয়েছে, যেমন-
হাইড্রোজেন গ্যাসের পরমাণু অক্সিজেন গ্যাসের পরমাণু থেকে আলাদা। মূলত পরমাণুতে প্রোটন বা ইলেকট্রনের সংখ্যার পার্থক্যের কারণে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের পরমাণুসমূহের মধ্যে পার্থক্য হয় ।
হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের পারমাণবিক সংখ্যা ভিন্ন কেন?
কোনো মৌলের একটি পরমাণুতে প্রোটনের সংখ্যাকে পারমাণবিক সংখ্যা (Atomic Number) বলা হয়। হাইড্রোজেনের একটি পরমাণুতে একটি প্রোটন আছে। অক্সিজেনের একটি পরমাণুতে ৮টি প্রোটন আছে । অর্থাৎ প্রোটন সংখ্যার ভিন্নতার কারণে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের পারমাণবিক সংখ্যা ভিন্ন ।
কার্বনের পারমাণবিক সংখ্যা ৬-এ থেকে কী তথ্য পাওয়া যায়?
কার্বনের পারমাণবিক সংখ্যা ৬ এর অর্থ C এর ১টি পরমাণুতে ৬টি প্রোটন রয়েছে। কেননা পারমাণবিক সংখ্যাকে যেহেতু কোনো মৌলের প্রোটনের সংখ্যা বুঝায়। আবার একটি পরমাণুতে যেহেতু প্রোটন আর ইলেকট্রনের সংখ্যা সমান, তাই বোঝা যায় কার্বনের একটি পরমাণুতে ৬টি ইলেকট্রন আছে ।
পরমাণুর নিউট্রন সংখ্যা কীভাবে হিসাব করা যায়?
কোনো মৌলের পরমাণুতে প্রোটন ও
নিউট্রনের সমষ্টিকে ভরসংখ্যা হিসাবে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ কোনো
মৌলের ভরসংখ্যা = (প্রোটনের সংখ্যা + নিউট্রনের সংখ্যা)। সুতরাং মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ও ভরসংখ্যা জানা থাকলে উক্ত সূত্র ব্যবহার করে পরমাণুর নিউট্রন সংখ্যা হিসাব করা যায়।
পরমাণুর ভরসংখ্যা কীভাবে নির্ধারিত হয়।
কোনো মৌলের পরমাণুতে প্রোটন ও নিউট্রনের সমষ্টিকে
ভরসংখ্যা হিসাবে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ কোনো মৌলের ভরসংখ্যা=
ঐ মৌলের পরমাণুতে (প্রোটনের সংখ্যা + নিউট্রনের সংখ্যা)। যেমন অক্সিজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ৮টি প্রোটন আর ৮টি নিউট্রন থাকে। তাই অক্সিজেনের ভরসংখ্যা = (৮ + ৮) = ১৬।
৪০A১৯ মৌলটির ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যা নির্ণয় কর।
A মৌলটির পারমাণবিক সংখ্যা ১৯। তাই মৌলটির প্রোটন
আছে ১৯টি। আবার কোনো পরমাণুতে প্রোটন আর ইলেকট্রনের
সংখ্যা সমান। অর্থাৎ, মৌলটির ইলেকট্রন সংখ্যা ১৯টি।
আবার মৌলটির ভরসংখ্যা = প্রোটনের সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা
-
অর্থাৎ A মৌলের নিউট্রন সংখ্যা = ভরসংখ্যা – প্রোটন সংখ্যা
সুতরাং, A মৌলের নিউট্রন সংখ্যা = ৪০ – ১৯ = ২১।
প্রোটিয়াম এবং ডিউটেরিয়াম পরস্পর আইসোটোপ – ব্যাখ্যা কর।
আইসোটোপ হলো একই মৌলের এমন পরমাণু, যাদের
নিউক্লিয়াসে প্রোটন সংখ্যা সমান কিন্তু নিউট্রন সংখ্যা ভিন্ন। প্রোটিয়াম
হাইড্রোজেনের সবচেয়ে সাধারণ আইসোটোপ, এর নিউক্লিয়াসে একটি
প্রোটন থাকে এবং কোনো নিউট্রন থাকে না। অন্যদিকে, ডিউটেরিয়ামের
নিউক্লিয়াসে একটি প্রোটন এবং একটি নিউট্রন থাকে। অর্থাৎ, একই
সংখ্যক প্রোটন থাকায় প্রোটিয়াম এবং ডিউটেরিয়ামের নিউটন বা
ভরসংখ্যা ভিন্ন হলেও এরা উভয়েই হাইড্রোজেন মৌলেরই আইসোটোপ ।
কার্বনের আইসোটোপ ব্যাখ্যা কর।
কার্বনের বেশিরভাগ পরমাণুতে ৬টি প্রোটন ও ৬টি নিউট্রন রয়েছে। কিন্তু কার্বনের কিছু পরমাণুতে ৭টি বা ৮টি নিউট্রনও থাকতে পারে। অর্থাৎ কার্বনের আরো দুইটি ভিন্ন রকমের পরমাণু বিদ্যমান যাদের প্রত্যেকের প্রোটন সংখ্যা একই কিন্তু নিউট্রন বা ভরসংখ্যা ভিন্ন থাকে । এ কারণে প্রকৃতিতে কার্বনের প্রধানত তিনটি আইসোটোপ রয়েছে।
আইসোটোপসমূহে রাসায়নিক ধর্ম একই কেন?
কোন মৌলের রাসায়নিক ধর্ম তার প্রোটন সংখ্যা দ্বারা প্রভাবিত
হয়। একই মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপের প্রোটন ও ইলেকট্রন সংখ্যা অভিন্ন থাকে । তাই একই মৌলের আইসোটোপসমূহের মধ্যে রাসায়নিক ধর্মে তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যায় না ।
আইসোটোপ তেজস্ক্রিয় হয় কেন?
সাধারণত আইসোটোপসমূহ অস্থায়ী। অস্থায়ী আইসোটোপ বিভিন্ন রকমের তেজস্ক্রিয় রশ্মি ও কণা বিকিরণ করে। এরকম তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করার ঘটনাকে তেজষ্ক্রিয়তা বলা হয়। তেজস্ক্রিয় ধর্মযুক্ত এরকম আইসোটোপকে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বলা হয়।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে আইসোটোপ কীভাবে ব্যবহৃত হয়?
বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে ও নিরাময়ে আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়।
কোনো ক্ষুদ্র রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্তের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কতগুলো
মৌলের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ পাঠিয়ে তা শনাক্ত করা যায়। একইভাবে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর কোন কোষ ক্যান্সার আক্রান্ত, তা আইসোটোপ দিয়ে নির্ণয় করা যায়।
কৃষিক্ষেত্রে আইসোটোপের দুটি ব্যবহার লেখ।
কৃষিক্ষেত্রে আইসোটোপের দুটি ব্যবহার নিচে লিখা হলো—
১. কৃষিক্ষেত্রে পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে আইসোটোপের তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহার করা হয়।
২. কখন কোন সার কী পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে, তা জানতে
তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করা হয় ।
খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে আইসোটোপ ব্যবহার করা হয় কেন?
: ব্যাকটেরিয়াসহ অনেক জীবাণু তেজস্ক্রিয় রশ্মিতে মারা যায়।
তাই তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহার করে খাদ্যদ্রব্য বা ফলমূলকে জীবাণুমুক্ত
করা যায়। এ কারণে খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ
ব্যবহার করা হয়।
কোনো ফসিল এর বয়স নির্ধারণ করা হয় কীভাবে?
সময়ের সাথে অস্থায়ী আইসোটোপের ক্ষয় হলেও স্থায়ী আইসোটোপের তেমন ক্ষয় হয় না। তাই কোনো ফসিলে স্থায়ী ও অস্থায়ী আইসোটোপের অনুপাত থেকে ফসিলটির বয়স সম্পর্কে
ধারণা পাওয়া যায়। অর্থাৎ তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ভাঙন বা ক্ষয় থেকে ফসিল এর বয়স নির্ধারণ করা হয়।
লিথিয়াম ও কার্বনের ইলেকট্রন বিন্যাস ভিন্ন - ব্যাখ্যা কর
লিথিয়াম (Li) ও কার্বন (C) এর ইলেকট্রন বিন্যাস-
Li(৩) → ২, ১
C(৬) → ২,৪
লিথিয়াম পরমাণুতে ৩টি ইলেকট্রন আছে। এদের মধ্যে ২টি ইলেকট্রন
প্রথম আর তৃতীয়টি দ্বিতীয় কক্ষপথে থাকে। একইভাবে কার্বন পরমাণুতে ৬টি ইলেকট্রন এর ২টি প্রথম কক্ষপথে এবং বাকি ৪টি দ্বিতীয় কক্ষপথে থাকে । অর্থাৎ Li ও C এর ইলেকট্রন বিন্যাস ভিন্ন।