স্পর্শ ছাড়া ক্রিয়াশীল বল Flashcards
অভিকর্ষ বল কাকে বলে
অভিকর্ষ বল হলো সেই আকর্ষণ শক্তি যা কোনো দুটি বস্তুকে একে অপরের দিকে টানে। আমাদের পৃথিবী এবং তার আশেপাশে থাকা যেকোনো বস্তুর মধ্যে এই আকর্ষণ কাজ করে। এর কারণেই কোনো জিনিস ওপর থেকে ছেড়ে দিলে মাটিতে পড়ে যায়।
সহজভাবে বললে, পৃথিবী তার কেন্দ্রের দিকে সকল বস্তুকে যে বল দিয়ে আকর্ষণ করে, সেটাই হলো অভিকর্ষ বল। এই বলের কারণেই আমরা মাটিতে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি, কোনো জিনিস ছুড়লে তা আবার মাটিতে ফিরে আসে, এবং চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে।
মনে রাখবে, মহাবিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তুর মধ্যে এই আকর্ষণ বল কাজ করে, তবে যদি একটি বস্তু পৃথিবী হয়, তখন সেই আকর্ষণ বলকে বিশেষভাবে অভিকর্ষ বল বলা হয়।
মহাকর্ষ বল কাকে বলে
মহাকর্ষ বল হলো মহাবিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তুর মধ্যেকার আকর্ষণ শক্তি। সহজভাবে বললে, ভর আছে এমন যেকোনো দুটি জিনিস একে অপরের দিকে টানে – এই টানার শক্তিটাই হলো মহাকর্ষ বল।
এই বলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো:
* সর্বজনীন: মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুর মধ্যেই এই বল কাজ করে, তা ছোট হোক বা বড় হোক।
* আকর্ষণধর্মী: মহাকর্ষ বল সবসময় দুটি বস্তুকে একে অপরের দিকে টানে, কখনোই ধাক্কা দেয় না।
* ভরের উপর নির্ভরশীল: বস্তুগুলোর ভর যত বেশি হবে, মহাকর্ষ বল তত শক্তিশালী হবে।
* দূরত্বের উপর নির্ভরশীল: বস্তুগুলোর মধ্যে দূরত্ব যত বেশি হবে, মহাকর্ষ বল তত দুর্বল হবে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা এই বলের প্রভাব অনেকভাবে দেখতে পাই। যেমন:
* পৃথিবী তার অভিকর্ষ বল দিয়ে আমাদের মাটিতে ধরে রেখেছে।
* সূর্য তার মহাকর্ষ বল দিয়ে পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহগুলোকে নিজের চারপাশে ঘুরতে বাধ্য করছে।
* কোনো জিনিস ওপরের দিকে ছুড়লে তা আবার মাটিতে ফিরে আসে এই মহাকর্ষ বলের কারণেই।
তাহলে মনে রাখবে, মহাবিশ্বের সকল বস্তুর মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণই হলো মহাকর্ষ বল।
নিউটনের গাণিতিক রূপ
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রের গাণিতিক রূপ হলো:
\boxed{F = G \frac{m_1 m_2}{r^2}}
এখানে:
* (F) হলো দুটি বস্তুর মধ্যে মহাকর্ষ বল।
* (G) হলো মহাকর্ষ ধ্রুবক। এর মান প্রায় (6.674 \times 10^{-11} , \text{N} \cdot \text{m}^2/\text{kg}^2)।
* (m_1) এবং (m_2) হলো বস্তু দুটির ভর।
* (r) হলো বস্তু দুটির কেন্দ্রের মধ্যবর্তী দূরত্ব।
এই সূত্রটি থেকে আমরা জানতে পারি যে:
* মহাকর্ষ বল বস্তুদ্বয়ের ভরের গুণফলের সাথে সরাসরি সমানুপাতিক। অর্থাৎ, ভর বাড়লে বল বাড়ে।
* মহাকর্ষ বল বস্তুদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎ, দূরত্ব বাড়লে বল দ্রুত কমে যায়।
এই সূত্রটি মহাবিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তুর মধ্যেকার আকর্ষণ বল হিসাব করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
G কে সর্বজনীন মহাকর্ষ ধ্রুবক বলা হয় কেন
‘G’ কে সর্বজনীন মহাকর্ষ ধ্রুবক বলার কারণ হলো এর মান মহাবিশ্বের যেকোনো স্থানে এবং যেকোনো দুটি বস্তুর জন্য একই থাকে। এর মান বস্তু দুটির ভর, মধ্যবর্তী দূরত্ব অথবা অন্য কোনো ভৌত বা রাসায়নিক অবস্থার উপর নির্ভর করে না।
সহজভাবে বললে, (G) একটি ধ্রুব সংখ্যা যা মহাকর্ষ বলের সূত্রটিকে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় এবং এর মান সর্বত্র অপরিবর্তিত থাকে। এই কারণেই একে “সর্বজনীন” বা “বিশ্বজনীন” বলা হয়।
এর মান হলো প্রায় (6.674 \times 10^{-11} , \text{N} \cdot \text{m}^2/\text{kg}^2)।
SI পদ্ধতিতে G এর মান কত ও CGS পদ্ধতিতে G এর মান কত
এসআই (SI) পদ্ধতিতে মহাকর্ষ ধ্রুবক (G) এর মান হলো:
G = 6.674 \times 10^{-11} \, \text{N} \cdot \text{m}^2/\text{kg}^2
সিজিএস (CGS) পদ্ধতিতে (G) এর মান হলো:
G = 6.674 \times 10^{-8} \, \text{dyne} \cdot \text{cm}^2/\text{g}^2
মনে রাখবে, এসআই একক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বহুল ব্যবহৃত। সিজিএস একক একসময় বেশি প্রচলিত ছিল, তবে বর্তমানে এর ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কমে গেছে।
গ্যালিলিও তিনটি সূত্র কি কি
গ্যালিলিও প্রধানত দুটি ক্ষেত্রে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র প্রদান করেছিলেন: স্থির অবস্থা থেকে পতনশীল বস্তুর গতি এবং জড়তার ধারণা।
স্থির অবস্থা থেকে পতনশীল বস্তুর গতির তিনটি সূত্র:
এই সূত্রগুলো সেই বস্তুগুলোর গতি বর্ণনা করে যা স্থির অবস্থা থেকে কোনো বাধা ছাড়াই কেবল অভিকর্ষের প্রভাবে নিচে পড়ে।
১. সময়ের সাথে সাথে বেগ বৃদ্ধি: স্থির অবস্থা থেকে পড়ন্ত বস্তুর বেগ সময়ের সাথে সাথে সমান হারে বাড়তে থাকে। এর মানে হলো, প্রতি সেকেন্ডে তার গতি একই পরিমাণে বাড়বে।
২. অতিক্রান্ত দূরত্ব সময়ের বর্গের সমানুপাতিক: স্থির অবস্থা থেকে পড়ন্ত বস্তু নির্দিষ্ট সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, সেই দূরত্ব সময়ের বর্গের (সময় × সময়) সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। যদি কোনো বস্তু ১ সেকেন্ডে ‘d’ দূরত্ব অতিক্রম করে, তবে ২ সেকেন্ডে সেটি ‘4d’ (২ × ২ × d) দূরত্ব অতিক্রম করবে।
৩. সকল বস্তু একই হারে পতিত হয় (বায়ুর বাধা উপেক্ষা করে): যদি বায়ুর বাধা না থাকে, তাহলে হালকা বস্তু এবং ভারী বস্তু একই উচ্চতা থেকে ছেড়ে দিলে একই সময়ে মাটিতে পড়বে।
জড়তার ধারণা:
গ্যালিলিও জড়তার ধারণাও দিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে নিউটনের গতির প্রথম সূত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
* জড়তা: কোনো বস্তু যে অবস্থায় আছে (স্থির বা গতিশীল), সে সেই অবস্থায় থাকতে চায় যতক্ষণ না বাইরে থেকে কোনো বল প্রয়োগ করা হয়। এর মানে হলো, একটি স্থির বস্তু স্থির থাকতে চাইবে এবং একটি গতিশীল বস্তু একই বেগে সরলরেখায় চলতে থাকবে যদি তার উপর কোনো ধাক্কা বা বাধা না আসে।
এই সূত্রগুলো পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করেছে, বিশেষ করে গতি এবং বলের ধারণাকে বুঝতে।
কুলম্বের সূত্র
কুলম্বের সূত্র হলো দুটি স্থির বৈদ্যুতিক চার্জের মধ্যে ক্রিয়াশীল বলের পরিমাণ নির্ণয় করার একটি সূত্র। এই সূত্র অনুযায়ী:
* দুটি চার্জের মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল তাদের চার্জের পরিমাণের গুণফলের সরাসরি সমানুপাতিক। এর মানে হলো, চার্জের পরিমাণ যত বেশি হবে, বলও তত বেশি হবে। যদি দুটি পজিটিভ চার্জ বা দুটি নেগেটিভ চার্জ থাকে, তাহলে তারা পরস্পরকে বিকর্ষণ করবে (দূরে ঠেলে দেবে)। আর যদি একটি পজিটিভ এবং একটি নেগেটিভ চার্জ থাকে, তাহলে তারা পরস্পরকে আকর্ষণ করবে (কাছে টানবে)।
* ঐ দুটি চার্জের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। এর মানে হলো, চার্জ দুটির মধ্যে দূরত্ব যত বাড়বে, বলের মান তত দ্রুত কমতে থাকবে। দূরত্ব দ্বিগুণ হলে বল চারগুণ কমে যাবে।
গাণিতিকভাবে কুলম্বের সূত্রকে এভাবে লেখা হয়:
F = k \frac{|q_1 q_2|}{r^2}
যেখানে:
* (F) হলো দুটি চার্জের মধ্যে ক্রিয়াশীল বৈদ্যুতিক বল (নিউটন এককে)।
* (k) হলো কুলম্বের ধ্রুবক। এর মান প্রায় (8.9875 \times 10^9 , \text{N} \cdot \text{m}^2/\text{C}^2)।
* (q_1) এবং (q_2) হলো দুটি চার্জের পরিমাণ (কুলম্ব এককে)।
* (r) হলো চার্জ দুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব (মিটার এককে)।
* (|q_1 q_2|) হলো চার্জ দুটির গুণফলের পরম মান, কারণ বলের মান সবসময় ধনাত্মক হয়।
সহজভাবে বললে, কুলম্বের সূত্র আমাদের জানায় যে দুটি স্থির চার্জ একে অপরের উপর কতটা শক্তি প্রয়োগ করবে, তা নির্ভর করে চার্জগুলোর আকারের উপর এবং তারা কত দূরে আছে তার উপর।
তড়িৎ আবেশ কাকে বলে
যখন কোনো চার্জিত বস্তুকে (যেমন একটি পজিটিভ চার্জযুক্ত কাঁচের রড) অন্য একটি অনাহিত পরিবাহী বস্তুর (যেমন একটি ধাতব গোলক) কাছে আনা হয়, কিন্তু স্পর্শ করানো হয় না, তখন অনাহিত পরিবাহী বস্তুটির কাছাকাছি প্রান্তে বিপরীতধর্মী চার্জ (যেমন নেগেটিভ চার্জ) এবং দূরবর্তী প্রান্তে সমধর্মী চার্জের (যেমন পজিটিভ চার্জ) সৃষ্টি হয়। এই ঘটনাকে তড়িৎ আবেশ বলে।
সহজভাবে বললে, চার্জিত বস্তুর প্রভাবে স্পর্শ ছাড়াই অন্য বস্তুতে চার্জের সৃষ্টি হওয়াকেই তড়িৎ আবেশ বলে।
বিষয়টি আরও একটু ভেঙে বলা যাক:
ধরা যাক, তুমি একটি পজিটিভ চার্জযুক্ত কাঁচের রড একটি ধাতব গোলকের কাছে আনলে। ধাতব গোলকের মধ্যে অনেক মুক্ত ইলেকট্রন (ঋণাত্মক চার্জ) থাকে। পজিটিভ চার্জযুক্ত রডটি কাছে আসার কারণে এই মুক্ত ইলেকট্রনগুলো রডের কাছাকাছি প্রান্তে আকৃষ্ট হয়। ফলে গোলকের এই প্রান্তটি নেগেটিভ চার্জে আহিত হয়। যেহেতু কিছু ইলেকট্রন একদিকে সরে গেছে, তাই গোলকের অন্য প্রান্তে ইলেকট্রনের অভাব দেখা দেয় এবং সেই প্রান্তটি পজিটিভ চার্জে আহিত হয়।
এইভাবে, কোনো সরাসরি সংযোগ ছাড়াই একটি চার্জিত বস্তুর প্রভাবে অন্য একটি পরিবাহী বস্তুতে চার্জের বিভাজন ঘটে, এবং এই প্রক্রিয়াটিই হলো তড়িৎ আবেশ। চার্জিত রডটিকে সরিয়ে নিলে গোলকটি আবার আগের মতো অনাহিত অবস্থায় ফিরে যায়।
স্থির তড়িৎ বল কাকে বলে
স্থির তড়িৎ বল হলো সেই আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল যা দুটি স্থির বৈদ্যুতিক চার্জের মধ্যে কাজ করে। যখন দুটি চার্জ স্থির অবস্থায় থাকে, তখন তারা একে অপরের উপর যে বল প্রয়োগ করে, সেটাই স্থির তড়িৎ বল।
এই বলের মান এবং দিক কুলম্বের সূত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়। কুলম্বের সূত্র অনুযায়ী:
* সমধর্মী চার্জ (যেমন + এবং + অথবা - এবং -) পরস্পরকে বিকর্ষণ করে, অর্থাৎ একে অপরের থেকে দূরে ঠেলে দেয়।
* বিপরীতধর্মী চার্জ (যেমন + এবং -) পরস্পরকে আকর্ষণ করে, অর্থাৎ একে অপরের দিকে টানে।
এই বলের মান চার্জের পরিমাণের উপর নির্ভর করে – চার্জ যত বেশি হবে, বলও তত বেশি হবে। একইসাথে, চার্জ দুটির মধ্যে দূরত্বের উপরও এই বল নির্ভর করে – দূরত্ব যত বাড়বে, বলের মান তত কমতে থাকবে।