বল ও চাপ Flashcards
বল কাকে বলে ?
বলের সংজ্ঞা
যা স্থির বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তাকে গতিশীল করে বা করতে চায় অথবা যা গতিশীল বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তার গতির পরিবর্তন করে বা করতে চায়, তাকে বল বলে।
অন্যভাবে বলা যায়, বল হল সেই বাহ্যিক কারণ যা কোনো বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়। এটি স্থির বস্তুকে গতিশীল করতে পারে, গতিশীল বস্তুর বেগ বা দিক পরিবর্তন করতে পারে অথবা বস্তুর আকার পরিবর্তন করতে পারে।
নিউটনের ৩টি সূত্র
নিউটনের ৩টি সূত্র হল:
১. প্রথম সূত্র: বাইরে থেকে কোনো বল প্রয়োগ করা না হলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির অবস্থায় থাকবে এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সমবেগে সরলরেখায় চলতে থাকবে।
২. দ্বিতীয় সূত্র: বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে।
৩. তৃতীয় সূত্র: প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।
নিউটনের ৩টি Math formula
নিশ্চিত! নিউটনের তিনটি গতিসূত্র পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক সূত্র। এখানে তাদের সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:
১. নিউটনের প্রথম গতিসূত্র (জড়তার সূত্র):
* যদি কোনো বস্তু স্থির থাকে, তবে সেটি স্থিরই থাকবে, এবং যদি গতিশীল থাকে, তবে একই গতিতে সরলরেখায় চলতে থাকবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত বাইরে থেকে কোনো বল প্রয়োগ করা হয়।
* সহজ কথায়, জিনিসগুলো তাদের অবস্থা পরিবর্তন করতে চায় না যদি না কেউ তাদের পরিবর্তন করতে বাধ্য করে। নিউটনের প্রথম গতিসূত্র অনুসারে, যদি কোনো বস্তুর ওপর বাইরে থেকে কোনো বল প্রয়োগ করা না হয়, তাহলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সমবেগে সরলরেখায় চলতে থাকবে।
এই সূত্র থেকে আমরা জড়তা ও বলের ধারণা পাই। জড়তা হলো বস্তুর সেই ধর্ম, যার জন্য বস্তু তার স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থা বজায় রাখতে চায়।
এই সূত্রকে গাণিতিকভাবে প্রকাশ করা যায়:
* যদি কোনো বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বল (F) শূন্য হয়, তাহলে তার ত্বরণ (a) ও শূন্য হবে। অর্থাৎ, a = 0।
* এই সূত্র থেকে আমরা আরও জানতে পারি যে, কোনো বস্তুর ভরবেগ (p) ধ্রুবক থাকবে, যদি তার ওপর কোনো বাহ্যিক বল প্রয়োগ করা না হয়। অর্থাৎ, p = ধ্রুবক।
নিউটনের প্রথম গতিসূত্রকে জড়তার সূত্রও বলা হয়।
২. নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্র (বলের সূত্র):
* কোনো বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার তার ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে, ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে।
* গাণিতিকভাবে, এটি এভাবে লেখা হয়: F = ma, যেখানে:
* F হলো বল (force)
* m হলো ভর (mass)
* a হলো ত্বরণ (acceleration)
* সহজ কথায়, কোনো বস্তুর ওপর যত বেশি বল প্রয়োগ করা হবে, তার ত্বরণও তত বেশি হবে।
৩. নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র (ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সূত্র):
* প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।
* সহজ কথায়, যখন তুমি কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করো, তখন সেই বস্তুটিও তোমার ওপর সমান ও বিপরীত দিকে বল প্রয়োগ করে।নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুসারে: “প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।”
অর্থাৎ, যখন একটি বস্তু অন্য বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করে, তখন দ্বিতীয় বস্তুটিও প্রথম বস্তুর উপর সমান এবং বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে।
এই সূত্রটি গাণিতিকভাবে এভাবে প্রকাশ করা যায়:
F₁₂ = -F₂₁
এখানে:
* F₁₂ হল প্রথম বস্তু কর্তৃক দ্বিতীয় বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল।
* F₂₁ হল দ্বিতীয় বস্তু কর্তৃক প্রথম বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল।
এই সূত্রটি আমাদের চারপাশের অনেক ঘটনা ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে। যেমন:
* যখন আমরা হাঁটি, তখন আমাদের পা মাটিতে বল প্রয়োগ করে এবং মাটিও আমাদের উপর সমান এবং বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে, যার ফলে আমরা এগিয়ে যেতে পারি।
* যখন একটি রকেট উড়ে যায়, তখন রকেটটি গ্যাসকে নিচের দিকে ধাক্কা দেয় এবং গ্যাসও রকেটকে উপরের দিকে ধাক্কা দেয়।
* যখন একটি বন্দুক থেকে গুলি ছোড়া হয়, তখন বন্দুকটি গুলিকে সামনের দিকে ধাক্কা দেয় এবং গুলিও বন্দুককে পিছনের দিকে ধাক্কা দেয়।
নিউটনের তৃতীয় সূত্রটি পদার্থবিজ্ঞানের একটি মৌলিক সূত্র এবং এটি আমাদের চারপাশের জগৎকে বুঝতে সাহায্য করে।
বলের বৈশিষ্ট্য
বলের ১০টি বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো:
১. দিক: বলের একটি নির্দিষ্ট দিক আছে। কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে সেটি সেই দিকেই গতিশীল হয়।
২. মান: বলের একটি নির্দিষ্ট মান আছে। বেশি মানের বল কোনো বস্তুর ওপর প্রয়োগ করলে সেটি বেশি গতিতে গতিশীল হয়।
৩. ক্রিয়াস্থল: বল কোনো বস্তুর ওপর একটি নির্দিষ্ট স্থানে ক্রিয়া করে।
৪. জড়তার পরিবর্তন: বল প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো বস্তুর জড়তার পরিবর্তন ঘটানো যায়। জড়তা হলো বস্তুর সেই ধর্ম, যার জন্য বস্তু তার স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থা বজায় রাখতে চায়।
৫. গতি পরিবর্তন: বল প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো বস্তুর গতির পরিবর্তন করা যায়। স্থির বস্তুকে গতিশীল করা যায়, আবার গতিশীল বস্তুর গতি কমানো বা বাড়ানো যায়।
৬. আকৃতি পরিবর্তন: বল প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো বস্তুর আকৃতির পরিবর্তন করা যায়। যেমন, স্প্রিং-এর ওপর বল প্রয়োগ করলে তার আকৃতির পরিবর্তন হয়।
৭. ত্বরণ সৃষ্টি: বল প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো বস্তুর ত্বরণ সৃষ্টি করা যায়। ত্বরণ হলো সময়ের সঙ্গে বস্তুর বেগের পরিবর্তনের হার।
৮. ভরবেগের পরিবর্তন: বল প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন করা যায়। ভরবেগ হলো বস্তুর ভর ও বেগের গুণফল।
৯. ভেক্টর রাশি: বল একটি ভেক্টর রাশি, কারণ এর মান ও দিক উভয়ই আছে।
১০. বিভিন্ন প্রকার: বল বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, যেমন - অভিকর্ষ বল, ঘর্ষণ বল, চৌম্বক বল, তড়িৎ বল ইত্যাদি।
ঘর্ষণ বল কাকে বলে
যখন দুটি বস্তু একে অপরের সংস্পর্শে থেকে একে অপরের ওপর দিয়ে চলতে চেষ্টা করে বা চলতে থাকে, তখন তাদের স্পর্শতলে গতির বিরুদ্ধে যে বল সৃষ্টি হয়, তাকে ঘর্ষণ বল বলে।
অন্যভাবে বলা যায়, ঘর্ষণ বল হলো সেই বল যা দুটি কঠিন বস্তুর আপেক্ষিক গতিকে বাধা দেয়। যেমন, মেঝেতে একটি বাক্স ঠেলে নিয়ে যাওয়ার সময় মেঝে ও বাক্সের মধ্যে যে বল কাজ করে, সেটি ঘর্ষণ বল।
ঘর্ষণ বলের কিছু উদাহরণ হলো:
* মেঝেতে হাঁটার সময় আমাদের পায়ের সঙ্গে মেঝের ঘর্ষণ
* গাড়ির চাকার সঙ্গে রাস্তার ঘর্ষণ
* একটি বইকে টেবিলের ওপর দিয়ে ঠেলে নিয়ে যাওয়ার সময় বই ও টেবিলের মধ্যে ঘর্ষণ।
স্থির অবস্থার ঘর্ষণ বল ও
গতিশীল অবস্থার ঘর্ষণ বল
যখন দুটি বস্তু একে অপরের সংস্পর্শে থাকা অবস্থায় স্থির থাকে এবং তাদের মধ্যে আপেক্ষিক গতি শুরু হওয়ার উপক্রম হয়, তখন তাদের স্পর্শতলে গতির বিরুদ্ধে যে ঘর্ষণ বল সৃষ্টি হয়, তাকে স্থির ঘর্ষণ বল বলে।
অন্যভাবে বলা যায়, স্থির ঘর্ষণ বল হলো সেই বল যা দুটি স্থির বস্তুর মধ্যে আপেক্ষিক গতির শুরুকে বাধা দেয়। যেমন, একটি ভারী বাক্স মেঝেতে স্থির অবস্থায় থাকলে, তাকে ঠেলে সরাতে গেলে প্রথমে যে বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়, সেটি স্থির ঘর্ষণ বল। )()()())()()()()()()()()()()()()()()()()()()()()()()())()(
যখন একটি বস্তু অন্য একটি বস্তুর ওপর দিয়ে চলতে থাকে, তখন তাদের স্পর্শতলে যে ঘর্ষণ বল কাজ করে, তাকে গতিশীল অবস্থার ঘর্ষণ বল বলে।
অন্যভাবে বলা যায়, যখন দুটি বস্তু একে অপরের ওপর দিয়ে গতিশীল অবস্থায় থাকে, তখন তাদের মধ্যে যে ঘর্ষণ বল ক্রিয়া করে, সেটিই গতিশীল অবস্থার ঘর্ষণ বল।
গতিশীল অবস্থার ঘর্ষণ বলের উদাহরণ:
* মেঝেতে একটি বাক্স ঠেলে নিয়ে যাওয়ার সময় মেঝে ও বাক্সের মধ্যে ঘর্ষণ।
* গাড়ির চাকার সঙ্গে রাস্তার ঘর্ষণ।
* বরফের ওপর স্কেটিং করার সময় স্কেটারের ব্লেড ও বরফের মধ্যে ঘর্ষণ।
ঘর্ষণ বলের বৈশিষ্ট্য
ঘর্ষণ বলের কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো:
১. গতির বিরুদ্ধে ক্রিয়া: ঘর্ষণ বল সর্বদা বস্তুর গতির বিরুদ্ধে ক্রিয়া করে। অর্থাৎ, বস্তু যেদিকে গতিশীল, ঘর্ষণ বল তার বিপরীত দিকে কাজ করে।
২. স্পর্শতলের ওপর নির্ভরতা: ঘর্ষণ বল দুটি বস্তুর স্পর্শতলের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। মসৃণ তলের চেয়ে অমসৃণ তলে ঘর্ষণ বল বেশি হয়।
৩. বস্তুর ভরের ওপর নির্ভরতা: ঘর্ষণ বল বস্তুর ভরের ওপর নির্ভর করে। বেশি ভরের বস্তুর ঘর্ষণ বল বেশি হয়।
৪. আপেক্ষিক গতি: ঘর্ষণ বল দুটি বস্তুর মধ্যে আপেক্ষিক গতির কারণেই সৃষ্টি হয়। যদি দুটি বস্তু একই বেগে একই দিকে চলতে থাকে, তবে তাদের মধ্যে কোনো ঘর্ষণ বল কাজ করে না।
৫. তাপ উৎপন্ন করে: ঘর্ষণের কারণে তাপ উৎপন্ন হয়। যেমন, দুটি হাত ঘষলে গরম লাগে।
৬. গতির পরিবর্তন: ঘর্ষণ বল বস্তুর গতির পরিবর্তন করতে পারে। এটি বস্তুর গতি কমাতে বা থামাতে পারে।
৭. বিভিন্ন প্রকার: ঘর্ষণ বল বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, যেমন - স্থিতি ঘর্ষণ, গতি ঘর্ষণ, আবর্ত ঘর্ষণ ইত্যাদি।
৮. প্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর: ঘর্ষণ বল একই সাথে প্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর। এটি আমাদের চলাচলে সাহায্য করে, আবার মেশিনের যন্ত্রাংশ ক্ষয় করে।
৯. ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে না: ঘর্ষণ বল স্পর্শতলের ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে না।
১০. সীমান্তিক মান: স্থিতি ঘর্ষণ বলের একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে। প্রযুক্ত বল এই সীমার চেয়ে বেশি হলে বস্তু গতিশীল হতে শুরু করে।
চাপ কাকে বলে
কোনো বস্তুর ওপর লম্বভাবে প্রযুক্ত বলের মান এবং ওই বস্তুর ক্ষেত্রফলের অনুপাতকে চাপ বলে। সহজভাবে বললে, চাপ হলো কোনো বস্তুর একক ক্ষেত্রফলের ওপর লম্বভাবে প্রযুক্ত বল।
চাপের সূত্র:
চাপ (P) = বল (F) / ক্ষেত্রফল (A)
চাপের একক:
* SI পদ্ধতিতে চাপের একক হলো প্যাসকেল (Pa)।
* অন্যান্য একক হলো নিউটন প্রতি বর্গমিটার (N/m²) এবং বার।
উদাহরণ:
* একটি পেরেক যখন কোনো কাঠের তক্তার ওপর লম্বভাবে বল প্রয়োগ করে, তখন পেরেকটি কাঠের তক্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
* একটি তরল পদার্থ যখন কোনো পাত্রের দেয়ালে বল প্রয়োগ করে, তখন তরল পদার্থ পাত্রের দেয়ালে চাপ সৃষ্টি করে।
তরলের চাপ
তরলের চাপ মানে হলো কোনো তরল পদার্থের ভেতরে কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে তার চারপাশের ক্ষেত্রফলের উপর লম্বভাবে যে বল প্রয়োগ করে, সেই বলকে ঐ ক্ষেত্রফল দিয়ে ভাগ করলে যে মান পাওয়া যায়।
সহজভাবে বললে, তরলের নিজস্ব ওজন আছে এবং এই ওজনের কারণে তরল তার সংস্পর্শে থাকা যেকোনো বস্তুর উপর চাপ দেয়। তুমি যদি একটি বোতলে জল ভরে তার নিচের দিকে একটি ছোট ছিদ্র করো, দেখবে সেই ছিদ্র দিয়ে জল বের হচ্ছে। এর কারণ হলো জলের চাপ।
তরলের চাপ গভীরতার সাথে সাথে বাড়ে। অর্থাৎ, তুমি যত গভীরে যাবে, তরলের চাপ তত বেশি অনুভব করবে। এছাড়াও, তরলের ঘনত্ব বাড়লে চাপও বাড়ে।
তরলের চাপ কীসের উপর নির্ভর করে
তরলের চাপ মূলত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে:
১. গভীরতা (h): তরলের পৃষ্ঠতল থেকে তুমি যত গভীরে যাবে, চাপ তত বাড়বে। এর কারণ হলো তোমার উপরে থাকা তরলের স্তম্ভের ওজন বেশি।
২. তরলের ঘনত্ব (ρ): তরল যত ঘন হবে, তার চাপও তত বেশি হবে। উদাহরণস্বরূপ, জলের চেয়ে লবণের দ্রবণ বেশি ঘন এবং তাই এর চাপও বেশি হবে।
৩. অভিকর্ষজ ত্বরণ (g): অভিকর্ষজ ত্বরণের কারণে তরলের ওজন অনুভূত হয় এবং সেই ওজনের কারণেই চাপ সৃষ্টি হয়। অভিকর্ষ না থাকলে তরলের কোনো চাপ থাকত না।
এই তিনটি বিষয়কে একত্রিত করে তরলের চাপের সূত্রটি লেখা হয়:
P = h \rho g
এখানে:
* P = তরলের চাপ
* h = গভীরতা
* \rho = তরলের ঘনত্ব
* g = অভিকর্ষজ ত্বরণ
ঘনত্ব কাকে বলে
বস্তুর ঘনত্ব মানে হলো তার একক আয়তনে কতটা ভর আছে। কোনো বস্তুর ভরকে (ওজন) যদি তার আয়তন দিয়ে ভাগ করা হয়, তাহলে সেই বস্তুর ঘনত্ব পাওয়া যায়।
সহজভাবে বললে, একটা নির্দিষ্ট জায়গায় কতটা “ঠাসাঠাসি” করে জিনিস আছে, সেটাই হলো ঘনত্ব।
যেমন ধরো, একটা ছোট বাক্সে যদি অনেকগুলো পাথর রাখা হয়, তাহলে সেই বাক্সটার ঘনত্ব বেশি হবে। কিন্তু যদি ঐ একই বাক্সে অল্প কয়েকটা পালক রাখা হয়, তাহলে তার ঘনত্ব কম হবে, কারণ পালকগুলো বেশি জায়গা নিলেও তাদের ভর খুব কম।
ঘনত্বের সূত্র হলো:
\rho = \frac{m}{V}
এখানে:
* \rho (রো) হলো ঘনত্ব
* m হলো ভর
* V হলো আয়তন
ঘনত্বের একক হলো কিলোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার (kg/m³) অথবা গ্রাম প্রতি ঘন সেন্টিমিটার (g/cm³)।
তরলের সমোচ্চশীলতা ধর্ম কাকে বলে
তরলের সমোচ্চশীলতা ধর্ম (Samochchoshilota Dharma) মানে হলো, স্থির অবস্থায় থাকা একই রকমের তরলের ভেতরের সব বিন্দুতে চাপ সবসময় সমান থাকে। সহজভাবে বললে, যদি কোনো পাত্রে একই ধরণের তরল রাখা হয় এবং তরলটি স্থির থাকে, তাহলে পাত্রের বিভিন্ন গভীরতায় তরলের চাপ একই হবে।
একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হবে। মনে করো তুমি একটা কাঁচের পাত্রে জল ঢেলেছো। জল যখন স্থির হয়ে যাবে, তখন তুমি দেখবে পাত্রের উপরের দিকে জলের যে চাপ, পাত্রের নিচের দিকেও জলের চাপ একই রকম। এটাই হলো তরলের সমোচ্চশীলতা ধর্ম।
তবে মনে রাখতে হবে, এই ধর্ম তখনই প্রযোজ্য হবে যখন তরলটি স্থির থাকে এবং সেটি একই রকমের তরল হয়। যদি তরলটি নড়াচড়া করে বা একাধিক রকমের তরল মেশানো থাকে, তাহলে চাপ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন হতে পারে।
তরলের সমোচ্চশীলতা ধর্মের প্রয়োগ
তরলের সমোচ্চশীলতা ধর্মের অনেক মজার ব্যবহার আছে! এই ধর্মটা বলে যে স্থির অবস্থায় থাকা একই রকম তরলের বিভিন্ন অংশের জলস্তর সবসময় একই উচ্চতায় থাকে, যদি তারা आपस में যুক্ত থাকে।
এখানে কিছু সাধারণ ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:
* চা বানানো: যখন তুমি কেটলিতে জল ঢালো, দেখবে সব জলটা একই উচ্চতায় থাকে।
* জল স্তর পরিমাপক: নির্মাণ ক্ষেত্রে বা অন্য কোনো জায়গায় তরলের স্তর মাপার জন্য এই নীতি ব্যবহার করা হয়। একটা সরু স্বচ্ছ টিউবের সাথে একটা বড় পাত্র যুক্ত করে তরলের স্তর দেখা যায়।
* ফাউন্টেন বা ঝর্ণা: ঝর্ণার জল একটা নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে পড়ে, কারণ জলাধারের জল সমোচ্চশীলতা ধর্মের জন্য একই উচ্চতায় থাকে।
* খালে জলসেচ: খালের জল বিভিন্ন জমিতে একই উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে এই ধর্মের জন্য।
* কম্পাউন্ড বা সংযুক্ত পাত্র: ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন পরীক্ষায় এই নীতি কাজে লাগানো হয়, যেখানে একাধিক পাত্র একটি নলের মাধ্যমে যুক্ত থাকে।
আশা করি এই উদাহরণগুলো তোমাকে তরলের সমোচ্চশীলতা ধর্মের প্রয়োগ বুঝতে সাহায্য করবে!
প্রমাণ বায়ু মন্ডলীয় চাপ
প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ হলো সমুদ্রপৃষ্ঠে স্বাভাবিক অবস্থায় বায়ু যে চাপ প্রয়োগ করে।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, আমাদের চারপাশে যে বাতাস আছে, তারও একটা ওজন আছে। এই ওজনের কারণে ভূপৃষ্ঠের ওপর একটা চাপ পড়ে। সমুদ্রের ধারে, স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এই চাপটা একটা নির্দিষ্ট মান ধরে নেওয়া হয়, যাতে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পরীক্ষা বা হিসাব করার সময় একটা নির্দিষ্ট মাপকাঠি ব্যবহার করতে পারেন। এই নির্দিষ্ট মানটাকেই প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বলা হয়।
প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের মান অনেকগুলো এককে প্রকাশ করা হয়, তার মধ্যে কয়েকটা হলো:
* 1 অ্যাটমোস্ফিয়ার (atm) - এটা প্রমাণ চাপের সবচেয়ে পরিচিত একক।
* 101325 প্যাসকেল (Pa) - প্যাসকেল হলো চাপের এসআই একক।
* 760 মিলিমিটার পারদ স্তম্ভ (mmHg) - আগেকার দিনে ব্যারোমিটার দিয়ে চাপ মাপার সময় পারদ স্তম্ভের উচ্চতা মাপা হতো।
* 760 টর (Torr) - টর এককটিও পারদ স্তম্ভের সাথে সম্পর্কিত।
তাহলে মনে রাখবে, প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ মানে হলো সমুদ্রপৃষ্ঠের স্বাভাবিক বায়ুচাপ, যা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কাজে একটা স্থির মান হিসেবে ধরা হয়।
প্লবতা কাকে বলে
প্লবতা হলো কোনো তরল পদার্থে (যেমন জল বা বাতাস) কোনো বস্তু নিমজ্জিত করলে সেই তরল বস্তুটির উপর যে ঊর্ধ্বমুখী চাপ প্রয়োগ করে, তাকে প্লবতা বলে।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, যখন তুমি কোনো জিনিসকে জলের মধ্যে ডোবাও, তখন জল সেই জিনিসটিকে ওপরের দিকে ঠেলে তোলার চেষ্টা করে। এই ঠেলে তোলার ক্ষমতাকেই প্লবতা বলা হয়।
পরীক্ষার জন্য এই সংজ্ঞাটি যথেষ্ট ভালো এবং সহজে মনে রাখা যাবে। এর সাথে তুমি আর্কিমিডিসের নীতিও উল্লেখ করতে পারো, যা বলে যে প্লবতা সেই তরলের ওজনের সমান যা বস্তুটি সরিয়ে দেয়।
প্লবতার বৈশিষ্ট্য
পরীক্ষার জন্য প্লবতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো:
* প্লবতা একটি ঊর্ধ্বমুখী বল। অর্থাৎ, এটি তরলের মধ্যে নিমজ্জিত বস্তুকে উপরের দিকে ঠেলে দেয়।
* প্লবতার মান বস্তু কর্তৃক অপসারিত তরলের ওজনের সমান। এটি আর্কিমিডিসের নীতি নামে পরিচিত। এর মানে হলো, কোনো বস্তু তরলের যতটা অংশ সরিয়ে দেয়, প্লবতা ঠিক ততটা তরলের ওজনের সমান হয়।
* প্লবতার মান বস্তুর উপাদানের উপর নির্ভর করে না, বরং এটি নির্ভর করে বস্তুর আয়তন এবং তরলের ঘনত্বের উপর। একই আকারের লোহার টুকরা এবং কাঠের টুকরাকে যদি একই তরলে ডোবানো হয়, তবে তারা একই পরিমাণ প্লবতা অনুভব করবে।
* যদি বস্তুর ওজন প্লবতার থেকে বেশি হয়, তবে বস্তুটি তরলে ডুবে যাবে।
* যদি বস্তুর ওজন প্লবতার সমান হয়, তবে বস্তুটি তরলের মধ্যে ভাসতে থাকবে।
* যদি বস্তুর ওজন প্লবতার থেকে কম হয়, তবে বস্তুটি তরলের কিছু অংশ ডুবিয়ে ভাসবে।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো ভালোভাবে মনে রাখলে তুমি পরীক্ষায় প্লবতা সম্পর্কে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে।
প্লবতার মান কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে
পরীক্ষার জন্য প্লবতার মান চারটি প্রধান বিষয়ের উপর নির্ভর করে:
১. বস্তুর নিমজ্জিত অংশের আয়তন: কোনো বস্তুর जितना অংশ তরলের মধ্যে ডোবানো থাকে, প্লবতার মান তত বেশি হয়। যদি একটি বড় বস্তুর সামান্য অংশ ডোবানো থাকে, তবে প্লবতা কম হবে। আবার যদি ছোট বস্তুর পুরো অংশ ডোবানো থাকে, তবে প্লবতা বেশি হবে।
২. তরলের ঘনত্ব: তরলের ঘনত্ব যত বেশি হয়, প্লবতার মানও তত বেশি হয়। উদাহরণস্বরূপ, লোনা জলের ঘনত্ব সাধারণ জলের চেয়ে বেশি, তাই লোনা জলে কোনো জিনিস ডোবালে সেটি বেশি প্লবতা অনুভব করবে।
৩. অভিকর্ষজ ত্বরণ (g): যদিও সাধারণভাবে প্লবতার আলোচনায় এটিকে ধ্রুবক ধরা হয় (পৃথিবীর পৃষ্ঠে এর মান প্রায় স্থির), তবুও প্লবতার মান অভিকর্ষজ ত্বরণের উপর নির্ভর করে। যদি অভিকর্ষজ ত্বরণের মান পরিবর্তিত হয়, তবে প্লবতার মানও পরিবর্তিত হবে।
৪. বস্তুর আকৃতি (কিছু ক্ষেত্রে): যদিও মূলতঃ নিমজ্জিত আয়তনের উপর প্লবতা নির্ভর করে, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে বস্তুর আকৃতিও সামান্য প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সাধারণভাবে, এই প্রভাবটি প্রথম দুটি বিষয়ের তুলনায় অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ।
পরীক্ষার জন্য প্রথম দুটি বিষয় (বস্তুর নিমজ্জিত অংশের আয়তন এবং তরলের ঘনত্ব) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি বিষয়ের উপরই প্লবতার মান মূলত নির্ভর করে।
আর্কিমিডিসের সূত্র
আর্কিমিডিসের সূত্র হলো পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। এটি বলে যে, যখন কোনো বস্তুকে কোনো স্থির তরল বা গ্যাসীয় পদার্থে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ডোবানো হয়, তখন বস্তুটি একটি ঊর্ধ্বমুখী বল অনুভব করে। এই ঊর্ধ্বমুখী বল বস্তুটি দ্বারা অপসারিত তরল বা গ্যাসীয় পদার্থের ওজনের সমান।
সহজভাবে বললে, যখন তুমি কোনো জিনিসকে জলের মধ্যে ডোবাও, তখন জল সেই জিনিসটিকে ওপরের দিকে ঠেলে তোলার চেষ্টা করে। এই ঠেলে তোলার বলটি হলো প্লবতা এবং আর্কিমিডিসের সূত্র অনুযায়ী এই প্লবতা বস্তুটি যতটা জল সরিয়ে দেয়, সেই জলের ওজনের সমান।
আর্কিমিডিসের সূত্রের গাণিতিক রূপ:
প্লবতা (F_b) = (V \times \rho \times g)
এখানে:
* (F_b) হলো প্লবতা (Buoyant force)।
* (V) হলো বস্তুর তরলে নিমজ্জিত অংশের আয়তন।
* (\rho) হলো তরলের ঘনত্ব (rho)।
* (g) হলো অভিকর্ষজ ত্বরণ।
আর্কিমিডিসের সূত্রের কিছু ব্যবহার:
* জাহাজ তৈরি: জাহাজ galle galle জল galle ভাসে কারণ এর নিচের অংশের আকার এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে এটি তার ওজনের চেয়ে বেশি জল অপসারিত করতে পারে, ফলে পর্যাপ্ত প্লবতা সৃষ্টি হয়।
* সাবমেরিন: সাবমেরিন প্লবতা নিয়ন্ত্রণ করে জলের নিচে ডুব দিতে বা উপরে ভাসতে পারে।
* বেলুন: গরম हवा বেলুন গরম বাতাসের প্লবতার কারণে আকাশে ওড়ে। গরম বাতাস ঠান্ডা বাতাসের চেয়ে হালকা হওয়ায় বেলুনটিকে উপরের দিকে ঠেলে তোলে।
* বস্তুর ঘনত্ব নির্ণয়: কোনো অনিয়মিত আকারের বস্তুর ঘনত্ব নির্ণয় করার জন্য আর্কিমিডিসের সূত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। বস্তুকে প্রথমে বাতাসে এবং পরে তরলে ওজন করে প্লবতা এবং তারপর ঘনত্ব বের করা হয়।
* হাইдроমিটার: এটি তরলের ঘনত্ব মাপার একটি যন্ত্র, যা আর্কিমিডিসের নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি।
আশা করি আর্কিমিডিসের সূত্রটি তুমি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছ।
বস্তুর ভাসন ও নিমজ্জনের শর্তগুলি কি কি
কোনো বস্তু তরলে ভাসবে নাকি ডুবে যাবে, তা মূলত দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে:
১. বস্তুর ওজন: বস্তুকে পৃথিবী যে বল দিয়ে নিজের কেন্দ্রের দিকে টানে, সেটাই তার ওজন।
২. প্লবতা: তরল পদার্থ বস্তুর উপর যে ঊর্ধ্বমুখী ধাক্কা দেয়, সেটি হলো প্লবতা।
এই ওজন এবং প্লবতার মধ্যে সম্পর্কই ঠিক করে বস্তুটি ভাসবে নাকি ডুববে। নিচে শর্তগুলো আলোচনা করা হলো:
* ভাসনের শর্ত: যদি বস্তুর ওজন প্লবতার চেয়ে কম হয়, তাহলে বস্তুটি তরলে ভাসবে। এর মানে হলো, তরল যে ধাক্কা দিচ্ছে, তা বস্তুর ওজনের চেয়ে বেশি, তাই বস্তুটি জলের উপরে ভেসে থাকে। যেমন - একটি কাঠের টুকরা জলে ভাসে।
* নিমজ্জনের শর্ত: যদি বস্তুর ওজন প্লবতার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে বস্তুটি তরলে ডুবে যাবে। এর মানে হলো, বস্তুর ওজন তরলের ধাক্কার চেয়ে বেশি, তাই বস্তুটি জলের তলায় চলে যায়। যেমন - একটি লোহার পেরেক জলে ডুবে যায়।
* ভাসমান থাকার শর্ত: যদি বস্তুর ওজন প্লবতার সমান হয়, তাহলে বস্তুটি তরলের মধ্যে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসতে থাকবে, কিন্তু নীচের দিকে ডুবে যাবে না। যেমন - সাবমেরিন জলের মধ্যে স্থিরভাবে ভেসে থাকতে পারে।
সহজভাবে মনে রাখার জন্য:
* ওজন < প্লবতা: ভাসবে
* ওজন > প্লবতা: ডুববে
* ওজন = প্লবতা: ভাসতে থাকবে (সম্পূর্ণ নিমজ্জিত অবস্থায়)