তড়িৎতের রাসায়নিক প্রভাব Flashcards
ইলেকট্রোড কাকে বলে
পরীক্ষার জন্য ইলেকট্রোডের একটি ভালো সংজ্ঞা হলো:
ইলেকট্রোড হলো একটি পরিবাহী বস্তু যার মাধ্যমে তড়িৎ বর্তনীতে বিদ্যুৎ প্রবেশ করে বা নির্গত হয়। অন্যভাবে বললে, এটি এমন একটি মাধ্যম যা কোনো তড়িৎ কোষ বা অন্য কোনো তড়িৎ রাসায়নিক সিস্টেমে তড়িৎ প্রবাহ এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।
ইলেকট্রোড সাধারণত ধাতু (যেমন তামা, প্ল্যাটিনাম, দস্তা) বা গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি হয়। তড়িৎ কোষের ক্ষেত্রে, অ্যানোড হলো সেই ইলেকট্রোড যেখানে জারণ (oxidation) ঘটে এবং ক্যাথোড হলো সেই ইলেকট্রোড যেখানে বিজারণ (reduction) ঘটে।
অ্যানোড কাকে বলে ও ক্যাথোড কাকে বলে
Anode (অ্যানোড):
বৈদ্যুতিক কোষ বা তড়িৎ বিশ্লেষণে (electrolysis) অ্যানোড হল সেই ইলেকট্রোড যেখানে জারণ (oxidation) বিক্রিয়া ঘটে। অর্থাৎ, এই ইলেকট্রোডে পরমাণু বা আয়ন ইলেকট্রন ত্যাগ করে।
* বৈদ্যুতিক কোষে (গ্যালভানিক কোষ বা ভোল্টাইক কোষ): অ্যানোড হল ঋণাত্মক মেরু (negative terminal)। এই ইলেকট্রোড থেকে ইলেকট্রন নির্গত হয়ে বহিরাগত বর্তনীতে (external circuit) যায়।
* তড়িৎ বিশ্লেষণে (ইলেকট্রোলিটিক কোষ): অ্যানোড হল ধনাত্মক মেরু (positive terminal)। দ্রবণে থাকা অ্যানায়ন (ঋণাত্মক আয়ন) অ্যানোডের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং সেখানে ইলেকট্রন ত্যাগ করে জারিত হয়।
সহজভাবে মনে রাখার জন্য: অ্যানোড = জারণ (Oxidation)
Cathode (ক্যাথোড):
বৈদ্যুতিক কোষ বা তড়িৎ বিশ্লেষণে ক্যাথোড হল সেই ইলেকট্রোড যেখানে বিজারণ (reduction) বিক্রিয়া ঘটে। অর্থাৎ, এই ইলেকট্রোডে পরমাণু বা আয়ন ইলেকট্রন গ্রহণ করে।
* বৈদ্যুতিক কোষে (গ্যালভানিক কোষ বা ভোল্টাইক কোষ): ক্যাথোড হল ধনাত্মক মেরু (positive terminal)। বহিরাগত বর্তনী থেকে ইলেকট্রন এসে এই ইলেকট্রোডে প্রবেশ করে এবং দ্রবণে থাকা ক্যাটায়ন (ধনাত্মক আয়ন) সেই ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিজারিত হয়।
* তড়িৎ বিশ্লেষণে (ইলেকট্রোলিটিক কোষ): ক্যাথোড হল ঋণাত্মক মেরু (negative terminal)। দ্রবণে থাকা ক্যাটায়ন (ধনাত্মক আয়ন) ক্যাথোডের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং ক্যাথোড থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিজারিত হয়।
সহজভাবে মনে রাখার জন্য: ক্যাথোড = বিজারণ (Reduction)
পরীক্ষার জন্য এই সংজ্ঞাগুলি স্পষ্ট এবং যথেষ্ট। অ্যানোড এবং ক্যাথোডের মেরু তড়িৎ কোষ এবং তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়, এটি উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ।
গলিত ক্যালশিয়াম ক্লোরাইডে ও গলিত ম্যাগশিয়াম ক্লোরাইডে কোন ধাতু পাওয়া সম্ভব এবং ক্যাথোড ও অ্যানোড বিক্রিয়ার কি হবে
গলিত ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (CaCl_2) এবং গলিত ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইডের (MgCl_2) তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ধাতু এবং অধাতু উভয়ই পাওয়া সম্ভব।
১. গলিত ক্যালসিয়াম ক্লোরাইডের (CaCl_2) তড়িৎ বিশ্লেষণ:
* ধাতু: ক্যাথোড (- ঋণাত্মক তড়িৎদ্বার) এ ক্যালসিয়াম (Ca) ধাতু পাওয়া যাবে। ক্যালসিয়াম আয়ন (Ca^{2+}) দুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে ধাতব ক্যালসিয়ামে বিজারিত হবে:
Ca^{2+} + 2e^- \rightarrow Ca(l)
* অধাতু: অ্যানোড (+ ধনাত্মক তড়িৎদ্বার) এ ক্লোরিন (Cl_2) গ্যাস পাওয়া যাবে। ক্লোরাইড আয়ন (Cl^−) একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে ক্লোরিন পরমাণুতে জারিত হবে, যা পরবর্তীতে দুটি পরমাণু যুক্ত হয়ে ক্লোরিন গ্যাস তৈরি করবে:
2Cl^- \rightarrow Cl_2(g) + 2e^-
২. গলিত ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইডের (MgCl_2) তড়িৎ বিশ্লেষণ:
* ধাতু: ক্যাথোড (- ঋণাত্মক তড়িৎদ্বার) এ ম্যাগনেসিয়াম (Mg) ধাতু পাওয়া যাবে। ম্যাগনেসিয়াম আয়ন (Mg^{2+}) দুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে ধাতব ম্যাগনেসিয়ামে বিজারিত হবে:
Mg^{2+} + 2e^- \rightarrow Mg(l)
* অধাতু: অ্যানোড (+ ধনাত্মক তড়িৎদ্বার) এ ক্লোরিন (Cl_2) গ্যাস পাওয়া যাবে। ক্লোরাইড আয়ন (Cl^−) একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে ক্লোরিন পরমাণুতে জারিত হবে, যা পরবর্তীতে দুটি পরমাণু যুক্ত হয়ে ক্লোরিন গ্যাস তৈরি করবে:
2Cl^- \rightarrow Cl_2(g) + 2e^-
সুতরাং, উভয় গলিত লবণ থেকেই ক্যাথোডে ধাতু (ক্যালসিয়াম বা ম্যাগনেসিয়াম) এবং অ্যানোডে অধাতু (ক্লোরিন গ্যাস) পাওয়া সম্ভব। ক্যাথোড এবং অ্যানোডের বিক্রিয়াগুলো উপরে উল্লেখ করা হলো।